হাঁসখালির নির্যাতিতার শ্রাদ্ধের কাজ করছেন পুরোহিত। নখ কাটছেন নাপিত।
শেষমেশ সম্পন্ন হল হাঁসখালির নির্যাতিতার শ্রাদ্ধের কাজ। নেপথ্যে স্থানীয় সিপিএম নেতারা। তাঁরাই পুরোহিত আর নাপিত ডেকে এনে নির্যাতিতা নাবালিকার শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করলেন। সন্ধ্যার মধ্যে শেষ করে ফেলা হয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের সমস্ত কাজকর্ম।
বিধি মেনে মৃত্যুর দশম শ্রাদ্ধের কাজ করার কথা ভেবেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। বৃহস্পতিবারই ছিল সেই দিন। সব ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন পুরোহিত হারান চক্রবর্তী (এলাকা বিশে ঠাকুর নামে পরিচিত) ও এক নাপিত। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে বিশে ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতেই রাজি হননি। পরে তিনি শুধু বলেন, ‘‘সামান্য যজমানি করে খাই। এ বিষয়ে জড়াব না। ও সব সিবিআই-টিবিআইয়ের চক্করে পড়তে চাইছি না।’’
হাঁসখালিতে নাবালিকার গণধর্ষণ এবং পরে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তার বাড়িতে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। এ সবের মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল নির্যাতিতার বাবা ও মাকে। তবে ওই দিনই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। ওই রুগ্ন শরীর নিয়েই মেয়ের শ্রাদ্ধের যৎসামান্য আয়োজন করেছিলেন মৃতার বাবা। শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যাওয়া গোটা পরিবারই মুষড়ে পড়েছিল গোটা পরিবার। নির্যাতিতার বাবার আর্তনাদ, ‘‘তা হলে কি মরেও শান্তি পাবে না মেয়েটা?’’
এমন সময়েই নির্যাতিতার বাড়ির উঠোনে হাজির হন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। এর পর তাঁরাই সমস্ত উদ্যোগ নিয়ে রানাঘাট থেকে এক জন পুরোহিত ও নাপিতকে ডেকে এনে শ্রাদ্ধের কাজ সম্পন্ন করান। এ বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘ধর্ম নয়, এখানে মানবিকতা ও সহমর্মিতাই বড় কথা। আমরা ঠিক সেটাই করেছি।’’ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘ভাগ্যিস ওরা ছিল! না-হলে মেয়ের শেষ কাজটাও করতে পারতাম না।’’