ছোঁয়ায়: হাতের কাজে ব্যস্ত তরুণী। ইনসেটে, বিবি রাসেল।
বিশ্ব দরবারে সমাদর পেয়েছে তাঁর ‘কন্যাশ্রী’। স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর ‘বিশ্ব বাংলা’ লোগো। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই তৈরি করে দেওয়া ‘বঙ্গালি’ লোগো নিয়ে নতুন উড়ান শুরু হচ্ছে লিলুয়া হোমের মেয়েদের।
মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া ‘লোগো’ ও ‘ব্র্যান্ড নেম’ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের প্রশিক্ষণকে সম্বল করে দেশ-বিদেশের বিস্তৃত পরিসরে নিজেদের তৈরি জিনিস নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন ওই হোমের আবাসিকেরা। তৈরি করতে চলেছেন নতুন পরিচয়। মুঠোয় ভরে নিতে চাইছেন অগাধ আত্মবিশ্বাস। তাঁদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি তো আছেনই। রয়েছেন জনা পনেরো রোহিঙ্গা কিশোরী-যুবতীও।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন হোমের মেয়েদের হাতের কাজ শেখানো হয়। বিষয়টিকে এত ছোট জায়গায় আটকে না-রেখে বছর দেড়েক আগে একটু অন্য ভাবে ভেবেছিল সমাজকল্যাণ দফতর এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন। যোগাযোগ করেছিল বিবি রাসেলের সঙ্গে। তিনি এক কথায় সম্মতি জানান। আট মাস ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মেয়েদের। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মাসখানেক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে লিলুয়া হোমে বিবি রাসেলের তত্ত্বাবধানে আবাসিকদের তৈরি জিনিসের বিপণনের জন্য ‘ব্র্যান্ড নেম’ ঠিক করে দিয়েছেন— ‘বঙ্গালি’। নিজেই এঁকে দিয়েছেন ব্র্যান্ডের লোগো।’’
অনন্যাদেবী জানান, বিবি নিজে চট্টগ্রামের মেয়ে। সেখানে অত্যাচারিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের স্রোত তাঁকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছিল। তা ছাড়া বহু বাংলাদেশি মেয়েও লিলুয়ায় রয়েছেন। ওই মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য একটুও সময় নেননি বিবি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লিলুয়া হোমে পড়ে থেকে মেয়েদের গামছা, শাড়ি, স্কার্ফ, ব্যাগ, গয়নাগাঁটি বানানো শিখিয়েছেন হাতে ধরে। পুরোটাই নিখরচায়।’’ বঙ্গালিকে নিয়ে শুরু হচ্ছে ভাগ্যবিড়ম্বিত মেয়েদের ভাগ্য বদলানোর অধ্যায়।
আগামী আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যাত্রা শুরু করছে ‘ব্র্যান্ড বঙ্গালি’। আপাতত বিশ্ব বাংলার সব স্টলে এই ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র পাওয়া যাবে। তার থেকে যে-টাকা আসবে, তা জমা হবে প্রস্তুতকর্তা মেয়েদের নামে। নারী দিবসের ঠিক পরের দিন, ৯ মার্চ আলিপুরের উত্তীর্ণ মুক্তমঞ্চে এই ব্র্যান্ডের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে ওই পোশাক ও গয়না পরে র্যাম্পে হাঁটবেন হোমের আবাসিক রোহিঙ্গা মেয়েরা। বার্তা দেবেন, ‘অত্যাচারিত হয়েও এই ভাবে ফিরে আসা যায়। সমস্ত আঘাত সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালানো যায়।’
নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের পাশাপাশি প্রায় ৩০ জন রোহিঙ্গা মহিলা রয়েছেন লিলুয়া হোমে। কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব তাঁদের অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের উপর থেকে মানবিক দৃষ্টি কিছুতেই ঘুরিয়ে নিতে পারে না। তাই অন্য আবাসিকদের মতো তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘‘সকলের সামনে মঞ্চে রোহিঙ্গা মেয়েরা যখন নতুন ব্র্যান্ডের পরিচয় দেবেন, সেটাই হবে সব বাধা ঠেলে উঠে দাঁড়ানোর বার্তা। যদি তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন, তা হলে বলতে পারবেন, ভারত থেকে তাঁরা এমন একটি কাজ শিখে আসতে পেরেছেন, যা তাঁদের বাঁচতে সাহায্য করতে পারে,’’ বলেন মন্ত্রী।