Israel-Hamas Conflict

রাজ্য সিপিএমের মুখপত্রে ইজ়রায়েলে হামাস-হামলার পক্ষে সওয়াল, ‘এমন ধাক্কা দেওয়া ইতিহাসে লেখা থাকবে’

গত ৭৫ বছরে প্যালেস্তাইনের ভিতরে তেল আভিভের ‘দখলদারি’ নিয়ে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট, বাম ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলি সরব হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম হামাস হানা দিয়েছে ইজ়রায়েলের জমিতে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:০৩
Share:

হামাসের হামলার পর জ্বলছে ইজ়রায়েলের জনপদ। —ছবি রয়টার্স।

প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র বাহিনী ‘হামাস’ গত ৭ অক্টোবর, শনিবার প্রথম হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল ভূখণ্ডে। তার পর দিন সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গের মুখপত্রের প্রথম পাতার শিরোনাম ছিল ‘ইজ়রায়েলের ভিতরে হামাস যোদ্ধারা’। অর্থাৎ হামাসকে ‘যোদ্ধা’ হিসাবে ভূষিত করেছিল সিপিএম। বৃহস্পতিবার উত্তর সম্পাদকীয় কলমে কাগজের সম্পাদক হামাসের হামলার পক্ষে সওয়াল করেছেন। সেই নিবন্ধের শিরোনাম ‘শুধু কি মার খাবে আর কাঁদবে?’

Advertisement

গত ৭৫ বছরে প্যালেস্তাইনের ভিতরে তেল আভিভের ‘দখলদারি’ নিয়ে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট, বাম ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলি সরব হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম হামাস হানা দিয়েছে ইজ়রায়েলের জমিতে। তার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে গাজ়া স্ট্রিপকে কার্যত মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর ইজ়রায়েল। জল, বিদ্যুৎ শেষ হয়ে এসেছে প্যালেস্তাইনে। এ হেন প্রেক্ষাপটে সিপিএমের মুখপত্রে এক দিকে যেমন তেল আভিভের ‘আধিপত্যবাদ’-এর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে, তেমনই হামাসের পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে ওই নিবন্ধে। লেখা হয়েছে, ‘এত দিন যা দেখা যায়নি, ৭ অক্টোবর তা দেখা গিয়েছে। ইজ়রায়েলের মধ্যে ঢুকে গিয়ে প্রত্যাঘাত করেছে হামাস। ইজ়রায়েলের লৌহবর্ম ভেঙে দিয়েছে। পাল্টা আক্রমণ হবে এবং তা হবে মারাত্মক, তা বুঝেই নিশ্চয়ই এই অভিযান। ইজ়রায়েল গাজ়াকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। কত হাজার মৃত্যু হবে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে। কিন্তু দখলদারদের এমন ধাক্কা দেওয়াও ইতিহাসে লেখা থাকবে।’

শুধু তা-ই নয়। হামাসকে যারা ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দিচ্ছে, তাদেরও সমালোচনা করা হয়েছে বঙ্গ সিপিএমের প্রভাতী দৈনিকে। উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, যারা ইয়াসের আরাফতকে সন্ত্রাসবাদী বলে সমালোচনা করত, তারাই হামাসকে একই বিশেষণ দিচ্ছে। ঘটনাচক্রে, ৪৮ ঘন্টা আগেই সিপিএম পলিটব্যুরো বিবৃতি দিয়ে হামাস এবং ইজ়রায়েলের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ বন্ধ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল। কিন্তু বঙ্গ সিপিএমের মুখপত্র সরাসরি হামাসের হামলাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিল।

Advertisement

শুধু সিপিএম নয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভারত তো বটেই, উপমহাদেশের প্রায় সবক’টি বাম দলই ইজ়রায়েলের নিন্দা করেছে। সেই সঙ্গে দেশের বাম এবং বিজেপি বিরোধী অনেক দলই ভারতের বিদেশনীতির রেওয়াজ ভেঙে, ভারসাম্য নষ্ট করে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, তার সমালোচনা করেছে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, মণিপুর নিয়ে ৭৮ দিন পর মুখ খুলেছিলেন মোদী। মাত্র ন’ঘণ্টাতেই কেন ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিতে হল তাঁকে? প্রসঙ্গত, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানইয়াহু তথা বিবি আকার সঙ্গে মোদীর ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সর্বজনবিদিত। অনেকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানাতেও এই বিষয়ে কত ‘সাবধানী’ পদক্ষেপ করত নয়াদিল্লি। কিন্তু এখন সে সবের বালাই-ই নেই।

অনেকের মতে, ইজ়রায়েলের প্রতি মোদীর ‘সহমর্মিতা’ দেখানো বিজেপির কৌশল। কারণ, তাতে ঘরোয়া রাজনীতিতেও মেরুকরণ তীব্র হবে। তাঁদের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণের কথা মাথায় রেখেই হয়তো সিপিএম খোলাখুলি সওয়াল করেছে ‘হামাস যোদ্ধাদের’ সমর্থনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement