হালিশহর পুরসভার সামনে নিরাপত্তা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
‘ঘরে ফিরে’ অফিসমুখোও হলেন পুরপ্রধান, কাউন্সিলরেরা।
মঙ্গলবার বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, হালিশহরে ভুয়ো কাউন্সিলর দেখিয়ে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। বুধবার ১২ জন কাউন্সিলরকে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের পরে ১২ জন কাউন্সিলরই পুরসভায় যান। তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁদের ঘর থেকে সরানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। এ দিন ফের সব ঘরেই ফিরে আসে দলনেত্রীর ছবি।
তবে যাঁকে নিয়ে বিতর্ক ছিল, হালিশহরের প্রাক্তন উপ পুরপ্রধান রাজা দত্তকে এ দিন পুরসভার ধারেপাশে দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজা জানান, বোর্ড তাঁদেরই থাকবে। হালিশহরের পুরপ্রধান অংশুমান রায় জানান, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিষেবার কাজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে যাবে।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের তিনটি পুরসভা তাঁদের হাতে এসে গিয়েছে বলে দিল্লি থেকে ঘোষণা করেছিল বিজেপি। তার মধ্যে হালিশহর ছিল অন্যতম। তিনজন ছাড়া ২৩ কাউন্সিলররের পুরসভার সকলেই দিল্লিতে গিয়ে পদ্ম শিবিরে ভিড়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে পুরপ্রধান-সহ ৯ কাউন্সিলর আর পুরসভায় যাননি। ফলে পুরসভার পরিষেবা শিকেয় উঠেছিল।
লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন রাজা। তারপরেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর রাজাকে অপসারিত করে। কিন্তু পুরবোর্ড বিজেপির হাতে যাওয়ার পরে রাজা উপ পুরপ্রধানের ঘরেই বসতে শুরু করেন। তাঁর হাত ধরে দিনভর দুষ্কৃতীরা পুরসভায় দাপাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। তাতে অনেক কর্মীও ভয়ে পুরসভায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি। এই সময়ে রাজা নিজের বেশ কিছু অনুগামীকে পুরসভায় কাজে ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ।যদিও রাজা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি পুরসভায় যাচ্ছিলেন কেন? রাজার জবাব, ‘‘তখন তো বিজেপির বোর্ড ছিল। ফলে আমার পুরসভার কাজ চালাতে অসুবিধা কোথায়? আর লোক নিয়োগ আমি করিনি। কিছু লোককে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’-র ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছিল।’’এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ১২ জন কাউন্সিলর একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে তাঁরা পুরসভায় যান। পুরপ্রধানের ঘরেই এক দফা বৈঠক করেন। ডাকা হয় আধিকারিকদেরও।
পুরপ্রধান জানান, বৈঠকেই ঠিক হয়েছে, আর একটি কাজের দিনও নষ্ট করা হবে না। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পরিষেবা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। তৃণমূলে ফেরার পরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন কাউন্সিলরেরা। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। গোলমাল এড়াতে পুরসভাতেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপ পুরপ্রধানের ঘরে তালা মেরে দেওয়া হয়। তবে ঘরের বাইরে এখনও রাজার নামের ফলক রয়েছে।
ভোটের ফলের পরে কাউন্সিলর বাসুদেব সাহার বাড়ি ভাঙচুর হয়েছিল। লুট হয়েছিল দোকান। এ দিন পুরপ্রধান তাঁর বাড়িতে যান। সেখানেও পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।