প্রতীকী ছবি।
প্রাঙ্গণে বইমেলা। ঘরে বসেও বইমেলা। এবং অবশ্যই কেনাকাটা।
সাড়ে চার দশকের পথ চলায় কলকাতা বইমেলা এই প্রথম উপস্থিত হচ্ছে ‘হাইব্রিড’ তথা মিশ্র আঙ্গিকে। কারণ করোনা। অতিমারির জন্য ২০২১ সালে হচ্ছেই না বইমেলা। পিছোতে পিছোতে, নানা নির্ঘণ্ট ওলটপালট করে তা সারা হতে চলেছে পাক্কা দু’বছর বাদে, ২০২২-এর জানুয়ারির শেষে। শুক্রবার বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের কর্তাদের ঘোষণা, ৩১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে তা সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০২১-এর বইমেলায় আসার কথা ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ২০২২ সালেও বইমেলার থিমদেশ বাংলাদেশ। এবং এ বারেও বঙ্গবন্ধুকন্যা আসতে পারেন বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।
কোভিড বিধি কড়া ভাবে মানার তাগিদে বইমেলার আয়োজনে খুলে যাচ্ছে নানা সম্ভাবনার দরজা। যেমন, বইমেলায় ঢোকার লাইনে এ বার মাস্ক পরার পাশাপাশি জোড়া টিকার প্রমাণ খুঁটিয়ে দেখা হবে। ঠেলাঠেলি এড়িয়ে সহজে ঢোকার জন্য ই-পাসের বন্দোবস্ত থাকছে। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং সভাপতি সুধাংশুশেখর দে জানান, সেই ই-পাস মিলবে গিল্ড তথা বইমেলার ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটে জোড়া টিকার শংসাপত্র দেখাতে হবে। মেলা চলাকালীন ঘণ্টায় ঘণ্টায় ই-পাস বুক করার ব্যবস্থাও থাকবে। শুধু তা-ই নয়, ওয়েবসাইট মারফত প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরায় ঘরে বসেই গোটা মেলা ঘুরে প্রতিটি দোকানে খুঁটিয়ে দেখা যাবে বলে জানান গিল্ডকর্তারা। ত্রিদিববাবু বলেন, ‘‘এক-একটি দোকানের বইয়ের তালিকা ঘেঁটে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ি বসে বই কেনারও সুবিধা থাকছে।’’ তবে এতশত ভার্চুয়াল ব্যবস্থার সঙ্গে সশরীরে বইমেলা উপভোগের বন্দোবস্তেও ফাঁক থাকবে না বলে আশ্বাস দিচ্ছেন গিল্ডকর্তারা। সুধাংশুবাবু বলেন, ‘‘খোলামেলা পরিবেশে মেলা করতে স্টলগুলো একটু ছোট হবে। তবে স্টলের সংখ্যা কমবে না। সবাই সুযোগ পাবেন।’’
বইমেলার নানা পরিকল্পনার পথে ইতিমধ্যে বিস্তর কাঁটা বিছিয়েছে কোভিড। যেমন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে বইমেলার উদ্বোধনে আসার কথা ছিল আনিসুজ্জামানের। তিনি গত বছর প্রয়াত হয়েছেন। বাংলাদেশের আরও দু’জন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, পণ্ডিত শামসুজ্জামান খান, হবিবুল্লা সিরাজিও প্রয়াত। উদ্যোক্তারা বলছিলেন, হয়তো সেলিনা হোসেন বা ইমদাদুল হক মিলনের মতো কোনও বিশিষ্ট লেখক আসবেন বইমেলার উদ্বোধনে। একই সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ বছর, সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের উদ্যাপনও মিশবে বইমেলার পরিসরে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, দেবেশ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতর্পণও হবে। বইমেলার আন্তর্জাতিক মেজাজেও ফাঁক থাকবে না। বাংলাদেশ ছাড়া স্পেন, রাশিয়া, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির উপস্থিতিও দেখা যাবে।