ফাইল চিত্র।
ভোট যদি হতে পারে, যদি হতে পারে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর গঙ্গাসাগর মেলা, বইমেলা কী দোষ করল? তার কপালেই বা শিকে ছিঁড়বে না কেন?
নিছক প্রশ্ন নয়, আশাভরসাও। তাই ওমিক্রন-ঝড় বা কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের পরাক্রান্ত পটভূমিতেও ‘বুক চিতিয়ে’ দাঁড়ানো অকুতোভয় প্রশাসনের উপরে ভরসা রেখে এ বার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা হবে ধরে নিয়েই এগোচ্ছেন উদ্যোক্তারা। ধন্দ যা থাকছে, তা শুধু এই ২০২২-এ বইমেলায় আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়াচটুকু নিয়েই। স্টল বিতরণ পর্বেই ঘেঁষাঘেঁষির চোটে সংক্রমণের আশঙ্কাও প্রবল। এ-সব মাথায় রেখেই স্টলের জন্য লটারি পর্ব থেকেই সতর্কতার পথে হাঁটছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড।
গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে বলছিলেন, “মেলার জন্য বরাদ্দ এলাকা তো কোনও ভাবেই বাড়বে না। আবার ছোট, বড় সব প্রকাশককে খুশি রাখতে কমানো যাবে না স্টলও। তাই আমাদের সামনে রাস্তা বলতে স্টলের জায়গা কমানো। সব স্টলই এ বার বেশ খানিকটা ছোট হবে। তাতে মেলায় হেঁটেচলে বেড়ানোর জায়গা বাড়বে।” গিল্ড সূত্রের খবর, অন্যান্য বার বইমেলার স্টলের মাপ ১০০ থেকে ১৬০০ বর্গ ফুটের মধ্যে থাকত। এ বার সেটা কমবেশি ৬৭ থেকে ১০৫০ বর্গ ফুটে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে মেলার স্টল বিলির প্রক্রিয়াও পাল্টেছে। এক গিল্ড-কর্তা বলেন, “আগে দিন দুয়েকের মধ্যে ৬০০ স্টলের বিলিবণ্টন সম্পন্ন হত। এ বার আলাদা, আলাদা দিনে আলাদা মাপের স্টল বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছে।” ফলে স্টল বণ্টন পর্বে ভিড় এড়ানো যাচ্ছে।
মেলায় থাকছে বড় থেকে ছোট— সাত মাপের স্টল। অন্যান্য বার প্রকাশকেরা লটারিতে ‘টোকেন’ তুলে আগে বা পরে স্টল বাছাইয়ের সুযোগ পেতেন। মেলার মানচিত্র পেতে নির্দিষ্ট মাপের স্টলের অবস্থান দেখে নিয়ে তাঁরা নিজেরাই অগ্রাধিকার অনুযায়ী মাঠের মনপসন্দ জায়গাটিও বেছে নিতেন। এ বার এই ব্যবস্থা পাল্টে গিয়েছে। বিভিন্ন নম্বরে চিহ্নিত করে মেলার মাঠের স্টল বিন্যাস আগেই সেরে রেখেছেন উদ্যোক্তারা। বাক্সবোঝাই হোমিয়োপ্যাথির পুরিয়ার মতো কাগজে স্টল নম্বর লেখা থাকছে। কপাল ঠুকে কাগজ বাছাইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশকের নির্দিষ্ট স্টলটিও ঠিক হয়ে যাবে। আর দিন দুয়েকের মধ্যে স্টল বণ্টন পর্বও মিটে যাবে। তবে বিভিন্ন হলের মধ্যে ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষার প্রকাশক কিংবা ভিন্ রাজ্যের প্রকাশকদের জন্য স্টল বিলি এখন বন্ধ থাকছে। ভিন্ রাজ্যের প্রকাশকদের অনেকেরই এখনই কলকাতায় আসা সম্ভব হচ্ছে না বলে গিল্ড সূত্রের খবর।
বইমেলা পূর্বনির্ধারিত ৩১ জানুয়ারি শুরু হবে কি না, সেই বিষয়ে অবশ্য কেউ ১০০ ভাগ নিশ্চিত নন। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “চলতি সপ্তাহেই সম্ভবত রাজ্য সরকার এই বিষয়ে আমাদের চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে।” তবে বইমেলা হলেও ভিন্দেশি অতিথিদের আগমন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিদেশি অতিথিদের পক্ষে কলকাতায় এসে ১৫ দিনের কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাস বিধি মেনে বইমেলায় শামিল হওয়া কঠিন। তবে এ দেশের বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। ‘থিম দেশ’ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন গিল্ডকর্তারা। বাংলাদেশি অতিথিদের ক্ষেত্রে অন্তত নিভৃতবাসের বিধি শিথিল করে মেলা আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়েও চলছে জল্পনা। ত্রিদিবববাবুর কথায়, ‘‘১০-১২ দিন আগে ছাড়পত্র পেলেও মাঠ প্রস্তুত করে বইমেলা করা যাবে। তার আগের যা কাজ, তা সেরে রাখছি।”
বিশশো বিশে শেষ বার বইমেলা হয়েছিল কলকাতায়। বিশশো বাইশে বইমেলার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার।