মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য ‘অ্যাড হক’ বোনাস ঘোষণা করল নবান্ন। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, যে সরকারি কর্মীদের বেতন মাসে ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে, তারাই চলতি অর্থবর্ষে এই বোনাস পাবেন। তার বেশি মাসিক বেতনধারীরা বোনাসের আওতায় পড়বেন না। মুসলিম কর্মীরা ইদের আগে এবং হিন্দু কর্মীরা দুর্গাপুজোর আগে পাবেন টাকা। বোনাস পাবেন পেনশনভোগীরাও।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের যে কর্মীদের মাসিক বেতন ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁরা ৬,৮০০ টাকা পাবেন। ২০১৯ সালের পশ্চিমবঙ্গ চাকরি (বেতন এবং ভাতা পর্যালোচনা) নীতি মেনে এই বোনাস দেওয়া হবে। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসার খরচ বা ভর্তুকি বাবদ কোনও ভাতা সংযুক্ত নয়। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের পরে যাঁদের বেতন ৪৪ হাজার টাকা গণ্ডি ছাড়িয়ে যাবে, তাঁরাও এই বোনাস পাবেন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে যে সব কর্মীরা টানা ছ’মাস কাজ করেছেন, তাঁরই এই ‘অ্যাড হক’ বোনাসের দাবিদার। তবে অবশ্যই তাঁদের মাসিক বেতন ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে হতে হবে। যে অস্থায়ী কর্মীরা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১২০ দিন কাজ করেছেন, তাঁরাও এই বোনাসের দাবিদার বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
‘অ্যাড হক’ বোনাস পাবেন পেনশনভোগীরাও। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা এই বোনাস পাবেন। যাঁরা ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবসর নিয়েছেন বা নেবেন, তাঁরাও পাবেন বোনাস। এই সময়কালে কোনও পেনশনভোগীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারও বোনাসের দাবিদার হবে। তবে তাঁদের পেনশন মাসে ৩৮ হাজার টাকার বেশি হলে চলবে না। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে যাঁদের পেনশন ৩৮ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁরা ৩,৫০০ টাকা করে পাবেন। কোনও পেনশনভোগীর মৃত্যু হলে তাঁর স্ত্রী-ও পাবেন এই সুবিধা। তবে বিশেষ বা রাজনৈতিক পেনশনভোগী বা পাকিস্তান থেকে আসা অভিবাসী পেনশনভোগীরা এই বোনাস পাবেন না। ব্যাঙ্কের যে অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে পেনশন, সেখানেই জমা পড়বে এই বোনাস। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরা অবসর নিয়ে পেনশন পাচ্ছেন, তাঁরাও এই বোনাস পাবেন। যাঁরা পঞ্চায়েত বা পুরসভায় কাজ করার পরে অবসর নিয়েছেন, সেই পেনশনভোগীরাও পাবেন সুবিধা।
২০২৫ সালের ৩১ মার্চের পরে যে সরকারি কর্মীদের মাসিক বেতন ৪৪ হাজার টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গেলেও ৫২ হাজার টাকার কম থাকবে, তাঁরা উৎসবের মরসুমে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম ঋণ নিতে পারবেন। সে জন্য তাঁদের সুদ দিতে হবে না। রাজ্য সরকারের স্থায়ী এবং অস্থায়ী উভয় কর্মীরাই এই সুবিধা পাবেন। তাঁদের বেতন থেকে এই টাকা কেটে নেওয়া হবে। তবে সর্বোচ্চ ১০টি কিস্তিতেই শোধ করতে হবে এই ঋণের টাকা। ২০২৬ সালের ৩১ অগস্টের মধ্যে কর্মীকে টাকা শোধ করতেই হবে। ২০২৫ সালের ১ নভেম্বরের আগে যে কর্মীরা অবসর নেবেন, তাঁরা উৎসবের মরসুমে এই ঋণ নিতে পারবেন না। তার পরে যাঁরা অবসর নেবেন, তাঁরা এই সুযোগ পাবেন। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ থেরে ১ অক্টোবরের মধ্যে যাঁরা রাজ্য সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁরাও ওই ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতার ব্যক্তিগত সচিবেরাও এই সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার যে সব কর্মীরা মাসে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বেতন পান, তাঁরা উৎসবের মরসুমে ৩,৫০০ টাকা বোনা পাবেন। ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে যাঁদের বেতন, তাঁরা ৬,৮০০ টাকা বোনাস পাবেন।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারের এই বোনাস মূলত কিছু জুনিয়র গ্ৰুপ ডি কর্মী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা পাবেন। সিংহভাগ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং কর্মচারী এই বোনাস পাবেন না। তাই এই বোনাসে শিক্ষক কর্মীদের কোনও লাভ হবে না।’’
যদিও শাসকদলের কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক বলেন, ‘‘৫০ হাজারের নীচে যাঁদের বেতন, তাঁরা বোনাস পাবেন। এ গ্রুপ আধিকারিক বা বি গ্রেডের আধিকারিকদের একাংশ বোনাস পান না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রান্তিক মানুষের কথা ভাবেন। তাই ৫০ হাজারের কম যাঁরা বেতন পান, সেই সব কর্মচারীদের বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অর্থ দফতরের এই বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে যাঁরা বোনাস পাবেন না বলছেন, তাঁরা বিনা সুদে সরকারের থেকে অগ্রিম অর্থ পেয়ে থাকেন। আর এটা তো অনেক দিনের নিয়ম, তাই অহেতুক বিতর্ক করে লাভ নেই। বরং এই সিদ্ধান্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।’’