Madhyamik 2022

WBBSE Madhyamik Result 2022: ঠাম্মাকে জিতিয়ে দিল নাতনি শ্রীজিতা

স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অকূল সাগরে পড়েন স্বপ্না দাস। শ্রীজিতা তখন নবম শ্রেণি। পুত্রবধূর পাশে দাঁড়ান শাশুড়ি মীরা।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ ০৬:১৪
Share:

ঠাকুরমার আশীর্বাদই পাথেয় শ্রীজিতার। নিজস্ব চিত্র।

বাবা নেই। করোনাকালেই আঁধার নেমেছিল পরিবারে। আলো জ্বালল বাপহারা মেয়ে। সৌজন্যে অশীতিপর ঠাকুরমা।

Advertisement

গড়বেতার শ্রীজিতা দাস মাধ্যমিকে ৬৬৬ নম্বর পেয়েছে। তার এই কৃতিত্বে সবচেয়ে খুশি ৮২ বছরের ঠাকুরমা মীরা দাস। বার্ধক্য থাবা বসিয়েছে। কানে খুব অল্প শোনেন। দৃষ্টিশক্তিও ঝাপসা। শুক্রবার বিকেলে নাতনিকে বুকে টেনে নিয়ে বৃদ্ধা ভাঙা গলায় বললেন, ‘‘নাতনি যতদূর পড়তে চায় পড়ুক। আমার পেনশন আছে।’’

শ্রীজিতা গড়বেতার উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাড়ি গড়বেতা শহরের উপর বনপুকুরে। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ। করোনার আতঙ্কে তখন কাঁপছে দেশ। ওই দিনই বাবাকে হারিয়েছিল শ্রীজিতা। মোটরবাইক থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়ে বেশ কয়েকমাস শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন পঞ্চায়েতের চুক্তিভিত্তিক কর্মী প্রদীপকুমার দাস। হয়েছিল অস্ত্রোপচার। তবুও বাঁচানো যায়নি। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। স্বামীকে হারিয়ে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অকূল সাগরে পড়েছিলেন স্বপ্না দাস। একদিকে আয়ের পথ বন্ধ, অন্য দিকে লকডাউন। শ্রীজিতা তখন নবম শ্রেণি। পুত্রবধূর পাশে দাঁড়ান শাশুড়ি মীরা। নিজের পেনশনের টাকা নাতনির হাতে তুলে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোর পড়াশোনার খরচ এ বার থেকে আমিই দেব।’’

Advertisement

দশ হাজার টাকা পারিবারিক পেনশন পান মীরা। চিকিৎসা-সহ নানা দরকারে খরচ করার জন্য সে টাকা নিজের কাছেই রাখতেন তিনি। ছেলেকে হারানোর শোক কাটিয়ে বৌমা, নাতনির পাশে দাঁড়ান মীরা। শ্রীজিতার মা স্বপ্না বলেন, ‘‘মায়ের পেনশনের প্রায় অর্ধেক টাকা তাঁর ওষুধপত্রেই খরচ হয়ে যায়। মা বলেছিলেন, ওষুধ আনতে হবে না। নাতনির পড়াশোনায় যাতে ক্ষতি না হয়।’’ শ্রীজিতা কন্যাশ্রী ১ তালিকাভুক্ত। তার স্কুল উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা উষ্ণা সানগিরি বলেন, ‘‘আর্থিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যৎসামান্য পেনশনের ভরসায় পড়াশোনা করে শ্রীজিতার এই লড়াই অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা।’’ শ্রীজিতা আইএএস হতে চায়। তবে তার আগে জয়েন্ট এন্ট্রান্সও দিতে চায়। নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগে শ্রীজিতা বলে, ‘‘ঠাম্মার আশীর্বাদে লড়াইয়ে জিতবই।’’

বৃদ্ধার ঝাপসা চোখ বেয়ে নামে অশ্রুধারা। নাতনির গালে হাত বুলিয়ে দেন ঠাকুরমা। বংশের সলতে আগলে রাখে অশক্ত হাত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement