মান্ধাতার আমলের জাবদা খাতায় হিসেবনিকেশের দিন শেষ। লেখাজোখার ক্ষেত্রে গরমিলের ফাঁকফোকরে দুর্নীতির যে-সব সুযোগ থাকে, নতুন ব্যবস্থায় তা-ও কমবে বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা।
নতুন ব্যবস্থা হল ডিজিটাইজেশন। রাজ্য সরকারের ‘গ্রুপ ডি’ কর্মীদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (জিপিএফ) বা ভবিষ্যনিধি তহবিলের নথি পুরোপুরি ডিজিটাল রূপ পেতে চলেছে। জেলা স্তরে ছোটখাটো সরকারি অফিস থেকে পুরো বিষয়টাই এ বার চলে যাবে পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রুপ ইনশিওরেন্স অধিকর্তার জিম্মায়। সাম্প্রতিক সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী জিপিএফের অনলাইন নথি তৈরি হলে কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা, যাবতীয় ঋণের হিসেব বা নমিনির বিষয়ে তথ্য থাকবে হাতের নাগালেই। একটি কেন্দ্রীয় অফিস (এ ক্ষেত্রে সল্টলেকের পূর্ত ভবনে পিএফ-পেনশন সংক্রান্ত অধিকর্তার দফতর) বিষয়টির দায়িত্বে থাকায় পুরো প্রক্রিয়া ত্রুটিহীন এবং স্বচ্ছও হবে বলে সরকারি কর্তাদের দাবি।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রুপ এ, বি এবং সি স্তরে জিপিএফের দায়িত্ব এখনও অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (এজি)-এর জিম্মায় রয়েছে। গ্রুপ ডি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এত দিন দেখতেন জেলার সরকারি অফিসের প্রধানেরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা অর্থ দফতরের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী গ্রুপ ডি কর্মচারীদের জিপিএফ অ্যাকাউন্টের সাম্প্রতিকতম নথি এবং গত আর্থিক বর্ষের জিপিএফের খুঁটিনাটি পূর্ত ভবনে পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড বিষয়ক অধিকর্তার জিম্মায় চলে যাবে। সরকারি নির্দেশিকা বলছে, জেলার অফিস থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে এই নথি পাঠাতে হবে। ই-গভর্ন্যান্সের অঙ্গ হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের ১০ সংখ্যার ইউনিক আইডি নম্বরটিই গ্রুপ ডি কর্মচারীদের পিএফ অ্যাকাউন্টের নম্বর বলে চিহ্নিত হবে।
নতুন ব্যবস্থায় পিএফের টাকা সরানোর দুর্নীতির আশঙ্কা নির্মূল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন
শাসক দলের অনুগত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের কোর কমিটির সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বা বাম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ অবশ্য এই ব্যাপারে একমত নন। ‘‘পিএফের টাকা সরানো ছাড়াও অফিসের দরকারে সরঞ্জাম কেনার নামে নিয়মিত গরমিল-গোলযোগ ঘটে থাকে। তাতে তো কারও হেলদোল নেই,’’ বলছেন মলয়বাবু।