ফাইল চিত্র।
বিধানসভার বাজেট অধিবেশনকে ঘিরে সরকার পক্ষ ও রাজভবনের সংঘাত ফের উচ্চ গ্রামে পৌঁছল। বিধানসভায় গোলমালের জন্য শাসক পক্ষের দিকে আঙুল তুলে স্পিকারকে চিঠি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিন দিনের মধ্যে এই ব্যাপারে সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের এমন বক্তব্য ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে জানিয়ে মঙ্গলবার রাতেই জবাবি চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন স্পিকার বিমানবাবু। অধিবেশনের ব্যস্ততার জন্য তিন দিনের মধ্যে রাজভবনে দেখা করতে যাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিধানসভায় স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। বিরোধী দলনেতা সোমবারই অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের মহিলা মন্ত্রী ও বিধায়কেরা রাজ্যপালকে ‘হেনস্থা’ করেছেন। সূত্রের খবর, বিরোধী দলনেতা মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন— এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারেন মহিলা মন্ত্রী ও শাসক দলের কয়েক জন মহিলা বিধায়ক। বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ আনা হলে পাল্টা পদক্ষেপের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বিজেপির
পরিষদীয় দলেও।
রাজ্যপালেরও অভিযোগ, রাজ্যের মহিলা মন্ত্রী-বিধায়কেরা যে ভাবে পথ আটকে তাঁর আসনের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তা নজিরবিহীন। পরিষদীয় মন্ত্রীও শাসক পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেননি। এমনকি, বিধানসভার মার্শাল এবং তাঁর সহযোগীরাও তাঁর বার্তায় (বিধানসভার সচিবের মাধ্যমে) কর্ণপাত করেনি। রাজ্যপালের বক্তব্য, গোটা ঘটনা থেকে নজর ঘুরিয়ে রাখলে তা গণতন্ত্রের বিপদ ডেকে আনবে। তাই আগামী তিন দিনের মধ্যে স্পিকারের সুবিধা অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
স্পিকার এ দিন পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘চিঠিতে (রাজ্যপালের) নির্দিষ্ট করে কয়েক জন মহিলা বিধায়ক-মন্ত্রীর নাম আছে। যাঁরা নিয়মিত বিধানসভায় আসেন, তাঁরাও ভিড়-হট্টগোলের মধ্যে সকলকে হয়তো চিনে নিতে পারবেন না। উনি কী ভাবে নাম জেনে গেলেন? চ্যালেঞ্জ করতে পারি, সকলের মধ্যে বসিয়ে দিলে নাম ধরে উনি চিনতে পারবেন না! বোঝাই যাচ্ছে, কোথা থেকে নাম নিয়ে কোন উদ্দেশ্যে এগুলো লেখা হয়েছে!’’
রাজ্যপালকে জবাবি চিঠিতে স্পিকার লিখেছেন, ‘আপনার চিঠির বক্তব্য শুধু সত্যের অপলাপই নয়। পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আপনি বিধায়কদের একাংশকে বদনাম করার জন্য এই ধরনের মত ব্যক্ত করেছেন। আরও বড় কথা, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা প্রতিনিধিদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে। আমি তিন দিনের মধ্যে যেতে পারছি না। কারণ বিধানসভার অধিবেশন ছাড়াও আমার পূর্বনির্ধারিত কাজ রয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন দলীয় সভায় বলেছেন, “বিধানসভায় গণতন্ত্র লুট করার কলঙ্কিত পরিকল্পনা করেছিল। আমাদের মহিলা ব্রিগেড তা রুখে দিয়েছে। গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। মহিলা মন্ত্রী ও বিধায়কদের বিজেপি অসম্মান করেছে। অপমান করেছে। কটু কথা বলেছে।” বিধানসভার অশান্তির সত্যাসত্য প্রমাণে ঘটনার ‘পুনর্গঠন’ও দাবি করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মহিলা মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়কদের অপমান করতে বিধানসভায় বিজেপি- রাজ্যপাল ছক ভেস্তে গিয়েছে। তাই এখন উল্টো অভিযোগ করা হচ্ছে। সত্য উদ্ঘাটনে রাজ্যপালকে এনে ঘটনার পুনর্গঠন জরুরি।’’
এরই মধ্যে রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের সময় আচমকাই কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বিধানসভায়। কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে সোমবারই ঠিক হয়েছিল, বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্ক চলবে। মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেবেন বৃহস্পতিবার। সেই মতো কাল, বুধবারের জন্য বক্তা তালিকাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যায় সরকারি মুখ্য সচেতকের দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানানো হয়, সূচি বদলে আজই শুধু বিতর্ক হবে এবং জবাবি ভাষণও হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, পরিবর্তিত সূচির প্রেক্ষিতে আজ আবার বি এ কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা হবে।