বিধানসভার গেটের সামনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ছবি: টুইটার
আচমকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে গত কাল কোনও কর্তার দেখা পাননি তিনি। আজ, বৃহস্পতিবার সে ভুল করেননি। আজ যে বিধানসভায় তিনি যাবেন, সেটা গতকালই জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু এ দিনও একই পরিস্থিতির মুখে পড়লেন তিনি। প্রথমে বিধানসভার বন্ধ গেটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল তাঁকে। তার পর ভিতরে ঢুকতে পারলেন। কিন্তু স্পিকার বা সরকার পক্ষের কারও দেখাই পেলেন না। প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা বিধানসভায় কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ধনখড় বললেন, ‘‘আমার হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে।’’ তবে তিনি যে থামবেন না, সে কথাও জানিয়ে গেলেন।
বুধবার রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছিল যে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বিধানসভায় যাবেন রাজ্যপাল। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সোমবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, মঙ্গলবার ও বুধবার বিধানসভা স্থগিত থাকবে। এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিধানসভার গেটে পৌঁছয় রাজ্যপালের গাড়ি। ইডেন গার্ডেন্সের উল্টোদিকের সেই গেট তখন বন্ধ। রাজ্যপাল সেই বন্ধ গেটের সামনেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। গেট থেকে ভিতরে সে খবর পৌঁছয়। গেট খোলা হবে কি না, জানতে চাওয়া হয়। গেট খোলার অনুমতি দেওয়া হয় এবং অবশেষে রাজ্যপাল বিধানসভা চত্বরে ঢুকতে পারেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভিতরে ঢুকে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বা সরকার পক্ষের কারওকে রাজ্যপাল এ দিন পাননি।
এ দিন সওয়া এক ঘণ্টার মতো বিধানসভায় ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই ক্ষোভ চেপে রাখেননি তিনি। বলেন ‘‘আমার অন্তর আজ রক্তাক্ত হয়েছে।’’ তিনি এই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, বিধানসভায় যে যাবেন, তা আগেই জানিয়েছিলেন, তা-ও বিধানসভার গেট প্রথমে বন্ধ পেলেন, পরে ভিতরে ঢুকেও স্পিকারকে বা সরকার পক্ষের কাউকে পেলেন না— এই ঘটনাকে অসৌজন্য হিসেবেই যে তিনি দেখছেন, তা এ দিন তিনি খোলাখুলি জানান। বিস্ময় নিয়ে ধনখড় এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বিধানসভায় যদি যেতে চান, তা হলে কর্মদিবস না হলেও বিধানসভা খোলা রাখতে হয়। সেখানে আজকের দিনটা কর্মদিবস হওয়া সত্ত্বেও বিধানসভা বন্ধ রাখা হল!’’
আরও পড়ুন: ‘পেঁয়াজ খান না বলেছেন, উনি কি অ্যাভোকাডো খান?’ নির্মলাকে কটাক্ষ চিদম্বরমের
বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান অবশ্য এ দিন সৌজন্য রক্ষা করেছেন। কিছুটা দেরিতে হলেও বিধানসভায় পৌঁছে এ দিন রাজ্যপালের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। রাজ্যপাল বিধানসভায় আসছেন জেনেই যে তিনি এসেছেন, তা-ও জানান মান্নান। দু’জনের মধ্যে করমর্দন হয়। কিছুক্ষণ সৌজন্যমূলক কথাবার্তাও হয়। পরে সংবাদমাধ্যমকে মান্নান বলেন, ‘‘আমি রাজ্যপালেরও সমালোচনা করব না, রাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করব না। কিন্তু এ দিন যা হল, তা ভাল হল না।’’
ধনখড়ের বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তার’ অভিযোগ প্রায় রোজই তুলছে রাজ্যের শাসক দল। ঠারেঠোরে তাঁকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। এ দিন বিধানসভা থেকে বেরনোর আগে রাজ্যপাল সে প্রসঙ্গও তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার আমার এমন একটা কাজ দেখিয়ে দিক, যেটা অসাংবিধানিক। আচার্য হিসাবে কি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারি না? নাকি রাজ্যপাল হিসাবে আমি বিধানসভায় আসতে পারি না?’’
আরও পড়ুন: কোর্টের পথে উন্নাওয়ের অন্য ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে
বার বার তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্ঘাত যতই সামনে আসুক না কেন, ধনখড় কিন্তু দমছেন না। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘বার বার বলা হচ্ছে, আমি মনোনীত। কিন্তু, মনে রাখবেন আমাকে রাষ্ট্রপতি এখানে পাঠিয়েছেন। সংবিধান রক্ষা করার জন্য পাঠিয়েছেন। তাই আমি থামব না। দরজায় দরজায় যাব। সংবিধান রক্ষা করার জন্য যা যা করার দরকার আমি তা করব।’’
এ দিন এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিজেপি।
রাজ্যপালের বিধানসভা সফরের কয়েক ঘণ্টা পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যপালের নাম না করে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘উনি রোজই একই কথা বলছেন। এমন আচরণে মনে হচ্ছে উনি রাজ্য সরকারের বিকল্প হওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ বিধানসভায় কর্মীরা কেন ছিল না? এই প্রশ্নের উত্তরে পার্থর জবাব, ‘‘কর্মীরা ওঁর এক্তিয়ারে নয়। এখানে অধ্যক্ষই প্রথম এবং শেষ কথা।’’