রাজ্যপালকে প্রণাম শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
তিনি সীমার বাইরে যান না। সমুদ্র সীমা ছাড়ালে প্রলয় হয়। তিনি সীমাতেই থাকেন। নদিয়ার শান্তিপুরে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বাড়ির রাস উৎসবের উদ্বোধন করতে এসে ফের এই কথা মনে করিয়ে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
রাজ্যপালের সিঙ্গুরে যাওয়া নিয়ে সোমবার বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। নিজের বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাজ্যপাল মঙ্গলবার বলেন, ‘‘লোক তো কুছ কহেঙ্গে! এক জন মন্ত্রী তো আমাকে ‘ট্যুরিস্ট’ বলেছিলেন। তা বলে আমি কি ট্যুরিস্ট?’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি হঠাৎ কোথাও যাই না। বুঝেশুনেই যাই। আজও এখানে নিমন্ত্রণ পেয়েই এসেছি। রাজ্যপাল হিসাবে ভারতীয় সংবিধানকে রক্ষা করা এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সেবা করার শপথ নিয়েছি।’’
দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েও সরকার কথা রাখেনি, এই অভিযোগে ফের পথে নেমেছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। রাসের অনুষ্ঠান শেষে এ দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়েও রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও রাজনীতি কাম্য নয়। শিক্ষকদের প্রাপ্য পাওয়া উচিত। তাঁরা রাস্তায় নামলে সেটা গণতন্ত্রের পক্ষে ভাল নয়।’’ এমন কথা বলে শিক্ষকদের আন্দোলনকে রাজ্যপাল কার্যত ‘মান্যতা’ দিলেন বলেই মনে করছে শাসক দল। প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্যার বিষয়ে কয়েক দিন আগে রাজ্যপালকে অবহিত করেছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।
রাজ্যপালের বক্তৃতায় রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে প্রচ্ছন্ন সমালোচনাও অনেকের কান এড়ায়নি। বিশেষ করে নদিয়ার মতো জেলা, যেখানে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে না-দেওয়ার বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল, সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বলেছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা আমাদের সকলের। আমি কী করতে চাই, সেটা ঠিক করার অধিকার যেন আমার থাকে।’’
একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়া এবং ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ পশ্চিমবঙ্গ অংশগ্রহণ না করায় সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান করি। উনিও রাজ্যের উন্নতি চান, আমিও চাই। পশ্চিমবঙ্গ আগে এক নম্বরে ছিল, আবার সেখানে নিয়ে যেতে হবে। কেন্দ্রের টাকা পাওয়া আমাদের অধিকার। সেই টাকা মানুষ না পেলে চিন্তার বিষয়।’’
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বারবার রাজ্যপাল ও শাসক শিবিরের ‘দূরত্ব’ স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু এ দিন কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিলেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। শাসক দল বা জনপ্রতিনিধিদের আর কাউকে দেখা না গেলেও রাজ্যপালকে প্রণাম করেই স্বাগত জানান বিধায়ক।