—ফাইল চিত্র।
মাত্র দু’দিন আগেই বিধানসভায় সরকারি ভাষণে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা-সহ সব বিষয়েরই ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রশ্ন তুললেন, এই পরিস্থিতিতে অশান্তিহীন ভোট কী ভাবে সম্ভব?
রাজ্যপাল আগেই জানিয়েছিলেন, সংবিধান মেনেই তিনি রাজ্য সরকারের তৈরি করা ভাষণ বিধানসভায় পাঠ করবেন। কিন্তু নিজের টিপ্পনি এবং পর্যবেক্ষণও জানাবেন। রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, তাঁর সেই টিপ্পনি দেওয়া এ বার শুরু হল! তাঁর এ দিনের মন্তব্য শুনে শাসক দল তৃণমূল মনে করিয়ে দিয়েছে, রাজভবনে বসে রাজ্যপাল ‘ভাল কাজ’ করলেই ভাল!
রাজ্যপাল এ দিন মধ্যমগ্রামে স্কাউটদের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। সেখানে এখন বিস্ফোরণ হচ্ছে? বিস্ফোরণের খবর পেলেই আমি মর্মাহত হই। কারণ, বিস্ফোরণে কেউ না কেউ বিশ্রী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখান থেকেই প্রমাণিত, এই এলাকা বিস্ফোরক-কারবারের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এখানে কী ভাবে অহিংস উপায়ে ভোট সম্ভব?’’
তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমি রাজ্যপালের কোনও মন্তব্যের ব্যাপারে নেই। এটা আইশৃঙ্খলার ব্যাপার। রাজ্যপাল তো রোজ কমেন্ট্রি করছেন! আমি তো আর ডেইলি কমেন্টেটর নই! উনি এমনিই রাজভবনে বসে থেকে ভাল কাজ করতে পারেন। তার জন্য সংবাদমাধ্যমের সাহায্য নেওয়ার দরকার নেই।’’
বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘বিধানসভায় সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্যথা করলে বিরোধীরা যে তাঁর পাশে থাকবে না, এই বার্তা আমরা দিতে পেরেছিলাম বলেই সে দিন রাজ্যপাল সরকারের দেওয়া ভাষণই পাঠ করেছিলেন। কিন্তু এটা ঠিক, রাজ্যের গোটা পরিস্থিতি বিস্ফোরক। নৈহাটি, গঙ্গারামপুর, ট্যাংরা— নানা ঘটনাতেই প্রতিদিন তা বোঝা যাচ্ছে।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল কখন কী বলেন, তার ঠিক নেই! তবে রাজ্য যে বারুদের স্তুপের উপরে বসে আছে, সরকার ছাড়া আর সকলেই তা বুঝতে পারছে।’’
বিজেপি অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই ধনখড়ের বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ঠিক বলেছেন। নৈহাটির বিস্ফোরণ আর পঞ্চায়েত ভোটের সন্ত্রাস কি মানুষ ভুলে যাবে?’’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানাতে আজ, সোমবার রাজ্যপালের কাছে যাবে বিজেপির বিধায়ক দল।
তবে রাজ্যপাল এ দিন জানিয়েছেন, তিনি আর সংঘাতের বাতাবরণ চান না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সকলকে রাজ্যের স্বার্থে এক দিশায় কাজ করতে হবে। শান্তি, অহিংসা এবং আনন্দ!’’