গাড়িতে আটকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —নিজস্ব চিত্র
ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরেই গেলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষক ও কর্মী সংগঠনের সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন রাজ্যপালকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাজ্যপাল ক্যাম্পাস ছাড়তেই শুরু হয়ে গেল সমাবর্তন অনুষ্ঠান। আচার্যের চেয়ার ফাঁকা রেখেই চলছে সমাবর্তন।
গতকাল সোমবার বলে গিয়েছিলেন, ‘কাল সমাবর্তনে ফের আসব’। সেই মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ফের ঘেরাও হলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই পাঁচ নম্বর গেটের কাছে তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কালো পতাকা হাতে নিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা। অন্য দিকে পড়ুয়াদের একাংশও রাজ্যপালকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। গোটা ঘটনা ঘিরে ফের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরেই তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।
বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর গাড়ি থেকে বেরিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালেয়র উপাচার্য হিসেবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মুহূর্ত। আমি মর্মাহত।’’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা এর জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক ব্যর্থতা।’’
ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে শিক্ষায় রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি করছে। এতে পড়ুয়াদেরই ক্ষতি হচ্ছে। রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, এটা না করতে।’’
ছাত্রদের একাংশ রাজ্যপালকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। অন্য দিকে রাজ্যপাল আটকে থাকায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানও শুরু করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস-সহ আধিকারিক-শিক্ষকরা বৈঠকে বসেন, রাজ্যপালকে ছাড়াই সমাবর্তন করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু রাজ্যপাল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আচার্যকে ছাড়া কোনও ভাবেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেবেন না তিনি।’’ ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। আমি নীরব দর্শক হয়ে থাকব না।
তৃণমূল সমর্থিত কর্মীরা সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধেও স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, দেশের সংসদে পাশ হওয়া কোনও আইন সবাই মেনে চলতে বাধ্য।’’ অন্য় দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের বক্তব্য, তাঁরা কিছুতেই রাজ্যপালকে ভিতরে যেতে দেবেন না। আগের নজির তুলে তাঁদের দাবি, আগেও আচার্যকে ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে। এ বারও সেই ভাবেই হোক।
রাজ্যপালের চেয়ার ফাঁকা রেখেই চলছে সমাবর্তন অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র
গোটা এই উত্তাল পরিস্থিতির জেরে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সমাবর্তন শুরু হয়নি। সমাবর্তন মঞ্চে অধিকাংশ আসন ফাঁকা। রাজ্যপালেরই অনুষ্ঠান সূচনা করার কথা। এই অবস্থায় কোর্টের সদস্যরা ঘেরাওকারী কর্মী-শিক্ষকদের কাছে আচার্যকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু কর্মী-শিক্ষকরা সেই দাবি মানেননি।
অন্য দিকে ঘেরাও অবস্থায় গাড়ির মধ্যে বসেই পর পর টুইট করতে থাকেন রাজ্যপাল।
লাইভ আপডেট
• দেড় ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরেও বিক্ষোভকারীরা অনড় থাকায় বেরিয়ে যান তিনি
• দুপুর ১২টা: ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়
• প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেলেন রাজ্যপাল
• সকাল ১১.৫০: আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুর হবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান, ঘোষণা কর্তৃপক্ষের
• ছাত্রদের বক্তব্য, আমরা অবশ্যই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পদক নিতে চাই। কিন্তু রাজ্যপালের হাতে নিতে চাই না