আইন-শৃঙ্খলা থেকে রাজনৈতিক হিংসা সমস্ত বিষয়ে রাজ্য় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।ফাইল চিত্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে আইনশৃঙ্খলা থেকে রাজনৈতিক হিংসা সমস্ত বিষয়ে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
বুধবার তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন। যাওয়ার আগে টুইট করে জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার তিনি শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর পরেই নয়াদিল্লিতে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আম জনতার সঙ্গে সংযুক্ত বেশ কিছু বিষয়, রাজ্যের আরও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাঁর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশদে কথা হয়েছে।
এর পরই তিনি রাজ্য প্রশাসনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘গোটা রাজ্য জুড়ে নৈরাজ্য চলছে। আইনের শাসন ভেঙে পড়ছে।” তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলারা সরাসরি রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। গোটা আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণ হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। রাজ্যপাল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘যে কোনও রাজ্যে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণ গনতন্ত্র টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
আরও পড়ুন: পরিবারে পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় শাসনে বঙ্গ বিজেপি
রাজ্য সরকারের প্রতি রাজ্যপালের এই আক্রমণের পরেই টুইট করে পাল্টা রাজ্যপালকে বিজেপির ‘লাউডস্পিকার’ বা মুখপাত্র বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রাজ্যপাল কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন না বিজেপি নেতাদের সঙ্গে’? কল্যাণ লিখেছেন, ‘এর আগে অন্তত ৯৯ বার এই একই কাজ করেছেন রাজ্যপাল। এটা ১০০তম বার। তিনি দিল্লি গিয়েছেন মিথ্যায় ভরা আবর্জনা নিয়ে’। কল্যাণ ধনখড়কে ‘রাজভবনের কলঙ্ক’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
এ প্রসঙ্গেই তিনি প্রশান্ত কিশোরের নাম না করে মন্তব্য করেন, ‘‘রাজ্যে ক্ষমতার অলিন্দ দখল করে নিয়েছে এমন কিছু মানুষ যাঁদের সঙ্গে সরাসরি রাজ্য রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গ তুলে তিনি ইঙ্গিত করেন, গোটা রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে। রাজ্যে মানবাধিকারের কোনও জায়গা নেই এই অভিযোগ তুলে তিনি ১৬ দিন ধরে হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা এক বিজেপি কর্মীর দেহের কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘হাইকোর্টের রায় থাকার পরও ওই ব্যক্তির দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে না। ফলে দেহ সৎকারও করা যাচ্ছে না।”
তাঁর দাবি, যে কোনও সমস্যার সমাধান সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও আলোচনা করতেই রাজি নয়। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি লিখে তিনি একটি বিষয় জানতে চাইলে দু’লাইনের উত্তর দিয়ে দায় সেরেছেন ডিজি। তাঁকে বাঁচাতে সরাসরি আসরে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী, অভিযোগ ধনখড়ের। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের এই আচরণে আমি বিস্মিত এবং লজ্জিত।”
আরও পড়ুন: উৎসবের ফাঁকেই এ বার পথে বামেরা
সূত্রের খবর, শাহকে এ সমস্ত বিষয় বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিপোর্ট দিয়েছেন। রাজ্য প্রশসনের আমলাদের উপস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন কতটা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন শাহের কাছে।