রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল এলেন। কিন্তু তাঁর ধারে-কাছে দেখা গেল না কল্যাণী আইটিআই মোড়ে লুমিনাস ক্লাবের পুজো কমিটির প্রায় কাউকেই। স্থানীয় থানার পুলিশ থাকলেও পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও অফিসারেরও দেখা মিলল না। যদিও কাছেই বুদ্ধপার্কে রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের দফতর। সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেননি কল্যাণীর মহকুমাশাসক বা পুরপ্রধানও। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।
লুমিনাস ক্লাবের পুজোটি কল্যাণী শহর তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুর পুজো বলেই পরিচিত। পুজো কমিটির সভাপতি, কল্যাণীর উপ-পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক বলরাম মাঝি। এ ছাড়াও তৃণমূলের অনেকেই এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস যখন মণ্ডপে আসেন, এঁদের প্রায় কাউকেই ধারে-কাছে দেখা যায়নি। প্রায় ১৫ মিনিট মণ্ডপে ছিলেন রাজ্যপাল। সেই সময়ে মহকুমাশাসকের দফতরের এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। পরে বাংলায় ‘ভ্রষ্টাচার’ ও হিংসার বিরুদ্ধে সংগ্রামের শপথ নেওয়ার কথা বলে রাজ্যপাল ফিরে যান।
রাজ্যপাল আসার আগে অবশ্য মণ্ডপে ছিলেন বলরাম মাঝি। তৃণমূলের এক মহিলা পুরপ্রতিনিধিও রাজ্যপাল মণ্ডপে ঢোকার ঠিক আগেই উধাও হয়ে যান। পুজো কমিটির কর্তাদের দাবি, রাজ্যপাল তাঁদের আগাম না জানিয়েই এসেছেন। তা ছাড়া রোজ রাত জাগার ফলে দুপুর ১২টার মধ্যে তাঁদের অনেকেরই মণ্ডপে হাজির হওয়া সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যপাল যে শুক্রবার আসছেন, তা পুজো কমিটিকে জানানো হয়েছিল।
রাজনৈতিক মহলে অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাতের জেরেই কি শাসক দলের নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের এই অনুপস্থিতি?
স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের মতে, “রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আধিকারিক এসেছেন, অথচ পুজো কমিটির লোকজন তো বটেই, এমনকি পুলিশকর্তারাও সেখানে উপস্থিত নেই। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের দাবি, ‘‘রাজ্যপাল এলে প্রোটোকল মেনে সকলের হাজির থাকা উচিত। পুজো কমিটি জানে না, এটা হতে পারে না। তৃণমূলের লোকেরা জেনে-বুঝেই আসেনি। এরা নোংরামির চরম পর্যায় পৌঁছেছে।’’ তবে লুমিনাসের পুজোর কর্ণধার অরূপ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রাজভবনের তরফে আমাদের পুজো কমিটিকে রাজ্যপালের আসার কথা জানানো হয়নি।” সভাপতি বলরামেরও দাবি, “আমরা হঠাৎ করেই জানতে পেরেছি। তখন অন্যত্র আগে থেকে নির্ধারিত কর্মসূচিতে ছিলাম।” রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কুমার সানি রাজ্যপালের প্রসঙ্গ উঠতেই ফোন কেটে দেন। কল্যাণী মহকুমাশাসক হীরক মণ্ডলকে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।