শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগের জবাব দিলেন রাজ্যপাল বোস। — ফাইল ছবি।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা সমালোচনার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তবে জানিয়ে দিলেন, রাজ্যপাল হিসেবে কী দায়িত্ব, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁর। সমালোচনাকে স্বাগত জানালেও, কোনও ধরনের সমালোচনার পক্ষপাতী তিনি নন, তা-ও জানিয়েছেন বোস। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি তাঁকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। সমালোচকরা সব সময় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, কারণ তাঁরা আপনার সামনে আয়না তুলে ধরেন। আমার সমালোচনা করার জন্য আমি শ্রী অধিকারীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কেউ সমালোচক (ক্রিটিক্যাল) হতে পারেন, কেউ অতিসমালোচক (সুপার ক্রিটিক্যাল) হতে পারেন, কিন্তু ভণ্ড সমালোচক (হিপোক্রিটিক্যাল) হলে চলবে না।’’
বর্তমান রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন শুভেন্দু। সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনাতেও তাঁর নিশানায় ‘মুখ্যমন্ত্রীর রাজনীতি’ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ‘রাজভবনের ভূমিকা’। এমনকি রাজভবনের কী করণীয়, দুই প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং জগদীপ ধনখড়ের কথা উল্লেখ করে তা-ও শুনিয়েছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যপাল শুধু রিপোর্ট চেয়ে পাঠাচ্ছেন, ‘অ্যাকশন’ কিছুই হচ্ছে না। তার জবাবে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি আজ (মঙ্গলবার) অকুস্থলে গিয়েছিলাম। কোনও রিপোর্ট লিখতে আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। আমি গিয়েছিলাম এটা দেখতে, যে রিপোর্ট আমাকে পাঠানো হয়েছে, তা কতটা সত্যি। আমি আমার নিজস্ব ধারণা তৈরি করেছি।’’ পাশাপাশি রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমার কী কাজ সে সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা আছে। রাজ্যপাল হিসাবে বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করা এবং রাজ্যের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা যাতে সংবিধান প্রদর্শিত পথেই থাকে তা নিশ্চিত করা আমার কাজ।’’ রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়, বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করছেন, তিনি রাজ্যের কাছ থেকেই কেবল রিপোর্ট চাইছেন, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চাইছেন না। জবাবে রাজ্যপাল বোস বলেন, ‘‘আমার কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠানো কাজ। কেন্দ্রের থেকে রিপোর্ট চাওয়া নয়।’’
হুগলির রিষড়ায় সোমবার রাতের অশান্তির পর, শিলিগুড়ি সফর কাটছাঁট করে কলকাতা ফিরে এসেছেন রাজ্যপাল। রাজভবনে ফেরার আগে রাজ্যপাল গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। সেখানে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন, নিজে ঘুরে দেখেন অশান্ত এলাকা। ফেরার পথে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি আহত যুবককে দেখে রাজভনে ফেরেন তিনি। রাজ্যের অশান্তি কবলিত এলাকায় ৩৫৫ ধারা জারির দাবি তুলেছেন শুভেন্দু। তারও জবাব দেন রাজ্যপাল। এবিপি আনন্দকে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো একটা দাবি। বিরোধী দলনেতার এই ধরনের দাবি করার অধিকার আছে। বিরোধীদের কাজই হল বিরোধিতা করা। তাই বিরোধী দলনেতা কিছু দাবি করছেন, এটা গণতন্ত্রে খুব স্বাভাবিক। রাজ্যপাল হিসাবে আমি সংবিধানের পথেই হাঁটব।’’
রাজ্যপাল জানান, আগামী ৬ এপ্রিল হনুমান জয়ন্তীর দিন যাতে আবার অশান্তির ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে। একই কথা সোমবার বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।