গত বছর হাতেখড়ির অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
গত এক বছরে তিনি কতটা বাংলা শিখেছেন? এক বছর আগে ২৬ জানুয়ারির বিকেলে রাজভবনের প্রশস্ত লনে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল। কারণ, ঘটনাচক্রে, সেদিন ছিল সরস্বতী পুজো। বাঙালি পরিবারে হাতেখড়ির ‘সুবর্ণলগ্ন’। একে সাধারণতন্ত্র দিবস। তায় সরস্বতী পুজো। তার আগের নভেম্বরে বাংলার রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সি ভি আনন্দ বোস। এবং জানিয়েছিলেন, তিনি গড়গড়িয়ে বাংলা বলতে এবং লিখতে শিখবেন। সেইমতোই সরস্বতী পুজোর বিকেলে তাঁর হাতেখড়ির আয়োজন হয়েছিল।
তাঁর কি মনে আছে গত বছর একইদিনে তাঁর বাংলায় হাতেখড়ির কথা? গত এক বছরে কতটা এগোল তাঁর বাংলা শিক্ষা? শুক্রবার বিকেলে রাজভবনের সেই একই লনে ‘অ্যাট হোম’ শীর্ষক চা-চক্রের অনুষ্ঠানের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে খানিক থমকালেন রাজ্যপাল। তার পরে হেসে ইংরেজিতে বললেন, ‘‘আই ক্যান ডেলিভার ফাইভ স্পিচেস ইন বেঙ্গলি!’’ আমি বাংলায় পাঁচটা ভাষণ দিতে পারি।
এক বছর আগের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের যিনি মূল আয়োজক তথা ব্যবস্থাপক ছিলেন, এক বছর পরের সাধারণতন্ত্র দিবসে তিনিও রাজভবনে ছিলেন। তবে ভিন্ন পরিচয়ে। তিনি নন্দিনী চক্রবর্তী। এক বছর আগে নন্দিনী ছিলেন রাজ্যপালের প্রধান সচিব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বাংলায় হাতেখড়ি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল। সেইমতো রাজ্য সরকার তার ব্যবস্থা করেছিল। রাজভবনের তরফে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছিলেন নন্দিনী। কিন্তু তার কয়েক মাসের মধ্যেই ছন্দপতন ঘটে। নন্দিনীকে রাজভবন থেকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। তার পর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা পর্যটন সচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সম্প্রতি নন্দিনীকে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার বিকালে রাজ্যপালের চা-চক্রে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই রাজভবনে যান স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী।
ঘটনাচক্রে, এক বছর আগে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের যে ‘সখ্য’ ছিল, এখন আর তা নেই। বোস রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সরকারের সঙ্গে তাঁর যে দহরম মহরম হয়েছিল, তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন, জগদীপ ধনখড়ের সময়ের আর পুনরাবৃত্তি হবে না। গোড়ায় রাজ্যপালের ভূমিকায় ‘ক্ষুব্ধ’ ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যপালের উচিত দিল্লিতে গিয়ে ধনখড়ের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া!’’ রাজভবনে রাজ্যপালের হাতেখড়ির অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন শুভেন্দু। যাননি বিজেপির অন্য কোনও নেতাও।
কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই রাজ্যপাল বোস নানাবিধ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে শুরু করেন। তৃণমূলও রাজ্যপালকে ‘বিজেপির দালাল’ বলা শুরু করে দেয়। এই রাজ্যপালকে ধনখড়ের থেকেও ‘সাংঘাতিক’ বলেছে তৃণমূল। অন্য দিকে, শুভেন্দু শিবির বলতে থাকে, এ বার ঠিক কাজ হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারেও শুভেন্দু রাজভবনে যাননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা গিয়েছিলেন। অনেকক্ষণ ছিলেনও। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর নমস্কার এবং কুশল বিনিময় হলেও এক বছর আগের মতো ‘উষ্ণতা’ দেখা যায়নি। রাজভবনে গিয়েছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব গৌতম সান্যাল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, বর্তমান মুখ্যসচিব বিপি গোপালিক, রাজ্যপুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন দুই নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ এবং বীরেন্দ্র। বিজেপির প্রতিনিধি বলতে তথাগত রায়।