গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই। বিকাশ ভবনের দাবি, এই পদক্ষেপ ‘বেআইনি’। মানছেন না রাজ্যপাল। সংঘাত চরমে। বিজ্ঞপ্তি, পাল্টা বিজ্ঞপ্তি, মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্যে টানাপড়েন আরও বেড়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন উপাচার্য এবং শিক্ষাবিদেরা মনে করেন, এই চাপানউতরের ফল ভুগছে হচ্ছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে। কেউ মনে করেন, রাজ্যপাল ‘বেআইনি’ কিছু করেননি। কেউ আবার মনে করছেন, বোস আইন ভেঙেছেন। অন্য একটা অংশ আবার মনে করছেন, রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হয়েই পদক্ষেপ করতে হবে।
সম্প্রতি রাজ্যপাল ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই, সেগুলিতে তিনিই আপাতত উপাচার্যের ভূমিকা পালন করবেন। তা নিয়ে কটাক্ষ করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। রবিবার রাতেই রাজভবনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ আগেও করেছেন রাজ্যপাল। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। অর্থাৎ, তিনি একই সঙ্গে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অমল মুখোপাধ্যায় স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপে প্রেসিডেন্সির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়কে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে বলা হচ্ছে, এই নিয়োগ ‘বেআইনি’। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন। এ সবের নেপথ্যে তিনি রাজ্যপালের ‘তালিবানি মনোভাব’কে দুষেছেন। তাঁর মতে, ‘জেমস বন্ড’-এর মতো কাজ করছেন রাজ্যপাল। এমনকি, আগের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গও তিনি তুলেছেন। জানিয়েছেন, আগের রাজ্যপালদের সঙ্গে কথাবার্তা হত। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বোসের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। রাজ্যপালের সচিবালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিকাশ ভবনের তরফে। চিঠিতে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর যে বিজ্ঞপ্তিটি রাজভবন থেকে জারি করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। বলা হয়েছে, রাজ্যে এ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তা ভাঙা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার ভাবনাচিন্তাও করছে শাসকদল। প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাজভবনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, আচার্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বভৌম অধিকর্তা হলেন উপাচার্যই। তাঁর অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা আচার্যের নির্দেশ মেনেই কাজ করবেন। সরকার তাঁদের নির্দেশ দিতেই পারে। কিন্তু সেই নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য নন।
প্রেসিডেন্সির নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য শুভ্রকমল এই বিষয়ে যদিও মুখ খোলেননি। শুধু জানিয়েছেন, তিনি এখন আর বিচারপতি নন। তাই আইনের ‘বিচার’ তিনি করবেন না। যদিও প্রেসিডেন্সিরই প্রাক্তন উপাচার্য অমল জানিয়েছেন, রাজ্যপাল কোনও বেআইনি কাজ করেননি। হাই কোর্টের রায় মেনেই পদক্ষেপ করেছেন তিনি। তিনি জানান, হাই কোর্ট কিছু দিন আগে একটি অর্ডার দিয়েছিল, তাতে বলেছিল, আচার্য হিসাবে রাজ্যপাল অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন। সেই রায় মেনেই পদক্ষেপ করেছেন রাজ্যপাল। এ কথা যদিও মানতে নারাজ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি জানিয়েছেন, সংবিধান রাজ্যপালকে উপাচার্য করেনি। তাঁকে উপাচার্য করেছে এ রাজ্যের আইন। তাই সেই আইন মেনে চলতে তিনি বাধ্য। অথচ সেই আইনেই রয়েছে যে, নিয়োগের আগে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, যা তিনি করছেন না। এমনটাই মত ওমপ্রকাশের। রাজ্য সরকারের চিঠি পাঠানোর পদক্ষেপকেও কুর্নিশ জানিয়েছেন তিনি। সোমবার জানিয়েছেন, গত চার মাস ধরে তিনি বার বার বলে চলেছেন। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট মতামত দেওয়ায় তিনি খুশি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী আবার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আদালতে কোনও বিচারপতির আসন খালি থাকলে কি কোনও উপাচার্যকে সেই জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হবে?’’ এই উপাচার্য বদলের অভিঘাত যে রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় পড়েছ, তা-ও জানিয়েছেন। অভিজিতের মতে, এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে রাজ্য সরকারকে।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার মনে করেন, এ ভাবে চললে আগামী দিনে যাঁরা কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও ক্লাস করতে যাবেন না।
পবিত্র সরকার (শিক্ষাবিদ): এই সংঘাত রাজ্যের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকেই সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। স্কুল শিক্ষা কার্যত শিকেয় উঠেছে রাজ্য সরকারের জন্য। উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিয়েছেন রাজ্যপাল। ফলে শিক্ষাকে আমরা যদি একটা প্রাসাদ ধরি, তা হলে তার ভিত থেকে ছাদ পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় এর অভিঘাত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু আসন খালি। যে জায়গায় পরিস্থিতি যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে যাঁরা কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও ক্লাস করতে যাবেন না।
অমল মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন উপাচার্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়): হাই কোর্ট কিছু দিন আগে একটি অর্ডার দিয়েছিল, তাতে বলেছিল, রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করতে পারে। রাজ্যপাল প্রথম দিকে নিয়োগ করার পর, রাজ্য সরকার নতুন উপাচার্যদের বেতন দেওয়া বন্ধ করেছিল। হাই কোর্ট বলে, উপাচার্যদের বেতন দিতে হবে। রাজ্যপাল যে অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করছেন, তা বেআইনি নয়। হাই কোর্টের মতে, তা আইনি পদক্ষেপ। আচার্য তা করতে পারেন। তবে রাজ্যপাল দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক জন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে পার্ট টাইম উপাচার্য নিয়োগ অনুচিত বলে মনে করি। সেখানে সব সময়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ করা উচিত। এ ভাবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে অবজ্ঞা করা হয়েছে। দুই পক্ষের যে বিবাদ, তা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সাধারণ মানুষ চাইব, অবিলম্বে এটা বন্ধ হোক। এতে ব্যহত হচ্ছে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা।
ওমপ্রকাশ মিশ্র (প্রাক্তন উপাচার্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়):
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া আইনে রাজ্যপাল আচার্য। সংবিধান রাজ্যপালকে আচার্য করেনি। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আচার্য। তাই এই আইনের যত ধারা রয়েছে, তা তিনি মেনে চলতে বাধ্য। অথচ দেখা যাচ্ছে, উনি আইনকে উপেক্ষা করে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর-ইনচার্জকে নিয়োগ করছেন। যাঁরা উপাচার্য বা অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নন। এই বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্ট পরিষ্কার করে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি অধ্যাপকদের নিয়োগ করছেন। আমাদের মতে এটা বেআইনি। এই নিয়োগের ক্ষমতা ওঁর নেই। উনি সার্চ এবং সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে যে সব অধ্যাপকদের নাম সুপারিশ হবে, তাঁদের নিয়োগ করতে পারেন। এই পদপ্রার্থীদের ১০ বছরের অধ্যাপকের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইন আরও বলছে, নিয়োগের আগে মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। উনি করছেন না। উনি তথাকথিত ভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন, অথচ ‘নিয়োগ’ বলছেন। ২০১৭ সালের আইনে রাজ্যপাল নিজে সই করেছিলেন। তার অন্তর্গত নিয়ম (২০১৯)-এ বলা রয়েছে, এক জন উপাচার্য বিকাশ ভবনের মাধ্যমে আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। এ-ও বলা রয়েছে, আচার্যকেও উচ্চ শিক্ষা দফতরের মাধ্যমেই উপাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। রাজ্য সরকার সোমবার চিঠি পাঠিয়েছে, রাজ্যপালের সচিবালয়ের তরফে যে নিয়োগ করা হচ্ছে, তা বেআইনি। গত চার মাস ধরে এটা বার বার বলে চলেছি। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট মতামত দেওয়ায় আমি খুশি।
অভিজিৎ চক্রবর্তী (প্রাক্তন উপাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়):
এক জন প্রাক্তন বিচারপতিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছে। কোনও আদালতে কোনও বিচারপতির আসন খালি থাকলে কি কোনও উপাচার্যকে সেই জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হবে? রাজ্যপাল চাইলে প্রতি দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বদল করতে পারেন। কিন্তু তার ফলে কী অভিঘাত তৈরি হচ্ছে সেটা দেখা প্রয়োজন। এর ফলে যেটা হচ্ছে, শিক্ষক, পড়ুয়া— সবাই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। অথবা তৃতীয় পক্ষ হিসাবে আদালতকে অভিমুখ নির্ধারণ করে দিতে হবে। না হলে উচ্চশিক্ষা আরও আরও খারাপ জায়গায় পৌঁছবে।
উপাচার্য নিয়োগ
রাজ্যের উপাচার্যহীন ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সম্প্রতি রাজ্যপাল ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আপাতত তিনি উপাচার্যের ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু, রবিবার রাতে রাজভবনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নতুন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করা হচ্ছে। এর আগেও রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এমন নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল। প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান-সহ রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অসুবিধায় পড়ছেন বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষাবিদদের একাংশ। তার পরেই উপাচার্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত রাজ্যপালের। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য তথা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়। অর্থাৎ তিনি একই সঙ্গে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন রাজকুমার কোঠারি, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে দেবব্রত বসু, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে গৌতম চক্রবর্তী, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ ভবনের তরফে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মাথায় বসানো হয়েছে তপন চক্রবর্তীকে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্সেসের দায়িত্ব পেয়েছেন শ্যামসুন্দর দানা।
‘জেমস বন্ড’
আগের রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা হত। নতুন রাজ্যপালের সঙ্গে তা-ও হয় না। সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। পাশাপাশি তিনি সিভি আনন্দকে ‘জেমস বন্ড’ বলে সম্বোধন করেছেন। ব্রাত্য জানান, জগদীপ ধনখড় যখন রাজ্যপাল ছিলেন, তখন আলোচনার পরিসর ছিল। এই রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনার কোনও জায়গা নেই। উনি ‘জেমস বন্ড’-এর মতো আচরণ করছেন। বর্তমান রাজ্যপাল বন্ডের মতো নিঃশব্দ প্রহেলিকা হয়ে কাজ করছেন। রাজ্যপালের ‘তালিবানি মনোভাব’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজ্যপাল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেউলিয়া করছেন জানিয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘‘রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ বিদূষক (গোপাল ভাঁড়) আমাদের রাজ্যপাল। তিনি নিয়মকানুনের ধার ধারেন না। আগের রাজ্যপালদের সঙ্গে ‘ডায়লগ’ হত। এখন শুধুই ‘মনোলগ’।’’ রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছেন ব্রাত্য।
বিধানসভায় প্রস্তাব
রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার চিন্তাভাবনা করছে তৃণমূল। আগামী বৃহস্পতিবার বিধানসভার বাদল অধিবেশনের শেষ দিন। ওই দিন পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আলোচনা হবে। সেই আলোচনায় অংশ নেবে তৃণমূল এবং বিজেপির পরিষদীয় দল। এখনও পর্যন্ত এই কর্মসূচি তৈরি রয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যপালের আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব বিধানসভায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। বিধানসভা সূত্রে খবর, এখনও এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তৃণমূল পরিষদীয় দলকে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে গত জুলাই মাসে যখন বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছিল, তখনই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল তৃণমূল পরিষদীয় দলের একাংশ। কিন্তু শেষমেশ শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি না-মেলায় সে বার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হয়নি বিধানসভায়। কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্য না রাজ্যপাল!
রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগ বিতর্কে আইনত কে ঠিক? রাজ্য না রাজ্যপাল? এই প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্সির নতুন উপাচার্য শুভ্রকমল জানালেন, তিনি এখন আর বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নন। তাই এই বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই। ব্রাত্য অভিযোগ করেছেন, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল আইন মানছেন না। কিন্তু আইন কি সত্যিই মানা হচ্ছে না? জবাবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল বলেন, ‘‘আমি তো এখন আর আইনের বিচার করতে বসিনি। যাঁর যাঁর নিজস্ব ক্ষোভ, অভিযোগ রয়েছে— সেই ক্ষোভ, অভিযোগ প্রকাশ করার নির্দিষ্ট জায়গায়ও রয়েছে। আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।’’ প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি শুভ্রকমল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েরও অস্থায়ী উপাচার্য। আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে সোমবার শুভ্রকমল জানিয়েছেন, দুই প্রতিষ্ঠানেঅ তিনি সমান ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করে যাবেন। তবে গণ্ডির বাইরে গিয়ে তিনি কোনও কাজ করবেন না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে মদ্যপান করার অভিযোগ উঠেছিল শুভ্রকমলের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, সব অভিযোগের জবাব তিনি দেবেন না। শুধু এটুকু বলতে চান যে, তিনি মদ্যপান করেন না।
বিকাশ ভবনের চিঠি
রাজভবনের বিজ্ঞপ্তির পাল্টা চিঠি দিয়েছে বিকাশ ভবন। রাজভবনের সচিবালয়ে পাঠানো হয়েছে সেই চিঠি। রাজ্যপালের সিনিয়র স্পেশ্যাল সেক্রেটারির কাছে। তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। চিঠিতে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, গত ২ সেপ্টেম্বর যে বিজ্ঞপ্তিটি রাজভবন থেকে জারি করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। রাজ্যে এ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, তা ভাঙা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। ওই চিঠিতে প্রথমেই বিকাশ ভবন জানিয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের ক্ষমতা সংক্রান্ত আইনের কথা। রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত দফতরের বিশেষ কমিশনারের স্বাক্ষর সম্বলিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালেই এ সংক্রান্ত আইন (ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটিজ রুলজ ২০১৯) প্রণয়ন করা হয়েছিল। ওই আইনের ৮(৫) ধারা অনুযায়ী, আচার্য যে কোনও সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইলে তা করতে হবে শিক্ষা দফতর মারফত। সেই নির্দেশ তখনই কার্যকর হবে যদি তাতে শিক্ষা দফতরের সায় থাকে। আইনে রয়েছে, আচার্যের কোনও সচিবালয়ও থাকবে না। রাজভবনের শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আচার্যের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বভৌম অধিকর্তা হলেন উপাচার্যই। তাঁর অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা তাঁরই নির্দেশ মেনে কাজ করবেন। সরকার তাঁদের নির্দেশ দিতেই পারে। কিন্তু সেই নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য নন।