বিধাননগরে কংগ্রেসের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের জেরে ‘ভুয়ো খবর’ বন্ধ করার নাম করে পুলিশকে দিয়ে প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে এ বার অভিযোগ করল বিরোধীরা। পুলিশ-প্রশাসনের আচরণকে ‘আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। যাঁরা পুলিশের তলব পাচ্ছেন, তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ খুলেছেন আরজি করে নিহত চিকিৎসক-ছাত্রীর মা-ও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ বন্ধের চেষ্টা করছেন। এখানে ১৪৪ ধারা জারি করছেন, যাতে মানুষ প্রতিবাদ না করতে পারেন।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, ভুল তথ্য দিয়ে যাঁরা মানুষকে বিপথে নিতে চাইছেন, তাঁদেরই পুলিশ ডাকছে।
সমাজমাধ্যমে পোস্ট ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠাতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রবিবার ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ করে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে পাল্টা ৬ দফা প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। আরজি করের ভিতরে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের ধরতে গড়িমসি কেন, ছবি দেখিয়ে তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও। দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের অভিযোগ, ‘‘প্রতিবাদের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করতে প্রতিবাদীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে, ফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। কলকাতা আর রাজ্য পুলিশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে জমায়েত বন্ধ করতে ন্যায় সংহিতা প্রয়োগ নিয়ে।’’ সিআইডি-তে থাকার সময়ে যে বিনীত গোয়েলকে দিয়ে কামদুনি-কাণ্ডে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল, তাঁকেই নগরপাল হিসেবে আরজি করের ঘটনায় একই ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও সেলিমের অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ভিতশ্রী’ বলে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও প্রশ্ন, ‘‘এই সিপি-র অতীত রেকর্ড কী? কামদুনি-কাণ্ডে অপরাধীদের রক্ষা করার স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সব রকমের চেষ্টা করেছেন।’’ আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন বিধাননগর টাউন ও যুব কংগ্রেস, উত্তর ব্যারাকপুর শহর কংগ্রেস-সহ দলের নানা শাখা সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমেছিল।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিনই এক্স হ্যান্ড্লে বার্তা দিয়েছেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দেশের বিভিন্ন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। মুক্ত চিন্তা সুস্থ গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড। নিজেদের মতামত জানানোর জন্য কেউ অকারণ হয়রানির শিকার হলে আমি বিনামূল্যে তাঁকে আইনি সহায়তা দেব।’ নিজের মেল আইডি দিয়ে তাঁকে মেল মারফত পুলিশের দেওয়া আইনি নোটিস পাঠাতে বলেছেন শুভেন্দু।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অনেকেই অনেক কিছু লিখছেন, সবাইকে ডাকা হয়নি। যাঁরা নির্যাতিতার নাম, ছবি ছড়িয়েছেন, ভুয়ো তথ্য দিয়ে মানুষকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন বা প্ররোচিত করছেন, শুধু তাঁদের ডাকা হয়েছে। হাতে ফোন আছে বলে তো যা খুশি পোস্ট করা যায় না!’’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘যত দিন না মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করছেন, তত দিন বিজেপি আন্দোলন চালিয়ে যাবে।” মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আজ, সোমবার কলকাতার ১৫টি জায়গায় ও জেলায় রাখি বন্ধন কর্মসূচি পালন করবে মহিলা মোর্চা। রাজ্য বিজেপির তরফে ধর্নার অনুমতি চেয়ে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন সুকান্ত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নেতৃত্বে কাল, মঙ্গলবার বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের ধর্নার পরিকল্পনা আছে। স্বাস্থ্যভবনে কর্মসূচি করার কথা বুধবার। রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীও বলেছেন, “বাঙালি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি না। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে।”