ফাইল চিত্র।
সূচি মেনে বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচিতে ক্ষয়ক্ষতির আবেদনে গবাদি পশুর উল্লেখের নেপথ্যে পশুর অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না, প্রশাসনিক মহল সেই বিষয়ে রীতিমতো ধন্দে। এই প্রেক্ষিতে আটটি জেলা মিলিয়ে জমা পড়া তিন লক্ষ ৮১ হাজার ৭৭৪টি আবেদনপত্রের মধ্যে যাচাই প্রক্রিয়ায় দু’লক্ষের কিছু বেশি আবেদনপত্র বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
জেলা-কর্তাদের অনেকেরই দাবি, অনেক আবেদনপত্রে উল্লিখিত তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই একেবারেই। আবার অনেক আবেদনপত্র এমন কিছুর কথা আছে, ক্ষতিপূরণের আওতায় যেগুলি আসতেই পারে না। আর এতেই আমপানের সময়ের সঙ্গে এ বারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে ক্ষয়ক্ষতিজনিত পরিস্থিতির স্পষ্ট ফারাক দেখা যাচ্ছে। এক জেলা-কর্তা বলেছেন, “আমপান-পরবর্তী পর্যায়ে যাচাইয়ের সময় প্রায় ছিলই না। তাড়াহুড়োয় অনেক সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এ বারের পদ্ধতি রীতিমতো পরিকল্পনা এবং সময়মাফিক ছিল। ফলে আবেদনপত্রের সবিস্তার যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া গিয়েছে।”
অনেক জেলা-কর্তা জানাচ্ছেন, গবাদি পশু সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির আবেদন যাচাইয়ে রীতিমতো ফাঁপরে পড়তে হচ্ছে সরকারের অনুসন্ধান-আধিকারিকদের। চাষের জমি, ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি চোখে ধরা পড়ে। কিন্তু গবাদি পশু সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির দাবি যথার্থ কি না, তার প্রমাণই বা কী হবে— এ-সবই এখন চর্চার বিষয়। জেলা-কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে ‘স্টেট ডিজ়াস্টার রিলিফ ফান্ড’ (এসডিআরএফ)-এ উল্লিখিত বিধি মেনেই ক্ষতিপূরণ নির্দিষ্ট হবে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীর যে গবাদি পশু ছিল, তার ন্যূনতম পারিপার্শ্বিক কোনও প্রমাণের খোঁজ করতে হবে অনুসন্ধান দলকে। কেউ যদি দাবি করেন যে, ইয়াসের ধাক্কায় তাঁর একাধিক গরু মারা গিয়েছে, তা হলে সেই পশু রাখার উপযুক্ত গোয়ালের অস্তিত্বও থাকা উচিত। একই ভাবে ছাগল রাখার প্রমাণ পাওয়াও অসম্ভব নয়। পশু ছিল কি না, অন্তত সেই প্রমাণ নিয়ে এসডিআরএফ বিধি মেনে নির্দিষ্ট হবে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক।
এক কর্তা বলেন, “এসডিআরএফ বিধি বলছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুধ দিতে পারে, এমন সর্বাধিক তিনটি বড় পশু এবং ৩০টি ছোট পশুর আর্থিক মূল্যই বিবেচ্য হবে। ফলে চাক্ষুষ প্রমাণ নেই বলে কেউ ইচ্ছামতো সংখ্যায় গবাদি পশুর মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। তবে হাঁস-মুরগির ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা নয়, সেগুলির ছানা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”
কর্তাদের অনুমান, ঘরবাড়ি, চাষের জমি, পানের বরজ, ইটভাটা-সহ বিভিন্ন সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ চেয়ে জমা পড়া আবেদনপত্রের মধ্যে যেগুলির যাচাই সম্পূর্ণ হয়েছে, সেগুলি দিয়েই ক্ষতিপূরণ বিলির কাজ শুরু করতে পারে রাজ্য। এক দিকে যেমন বাকি যাচাইয়ের কাজ চলবে, পাশাপাশি চলবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজও।
‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচিতে জমা পড়া ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আবেদনের যাচাই প্রক্রিয়া এখন শেষ লগ্নে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এ দিন ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রায় ৫০০০ যোগ্য আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে দফায় দফায় চলবে ক্ষতিপূরণ বিলির কাজ। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কিছু দিন যাচাই-প্রক্রিয়া বাধা পেয়েছিল। ফলে যাচাইয়ের বাকি ৪-৫ শতাংশ কাজও চলবে সমান্তরাল ভাবে।