সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তার পুরোটাতেই এখন চাষ হচ্ছে বলে দাবি করল রাজ্য সরকার। সেই দাবি উড়িয়ে বিরোধীদের আবার পাল্টা চ্যালেঞ্জ, যে কেউ গিয়ে দেখে আসতে পারেন সিঙ্গুরের ওই জমিতে ঠিক কেমন চাষ হচ্ছে! শিল্প চাই, কাজ চাই— এই স্লোগান দিয়ে এবং কৃষক, শ্রমিকের আরও নানা দাবি নিয়ে সিঙ্গুর থেকেই আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর কলকাতায় রাজভবন পর্যন্ত পদযাত্রা করবে সিপিএম।
সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি ফেরত দেওয়ার পরে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সে কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি বলে অভিযোগ আছে স্থানীয় জমির মালিকদের। বিধানসভায় সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন করেছিলেন হরিরামপুরের সিপিএম বিধায়ক রফিকুল ইসলাম। তবে সোমবার প্রশ্নোত্তর-পর্বে একেবারে শেষে থাকায় প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রশ্নের লিখিত উত্তরে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সিঙ্গুরে শিল্পের জন্য ৯৯৫.৯২একর জমি নেওয়া হয়েছিল। শিল্পের জন্য নেওয়া সেই জমির ৯৫৫.৯০ একর চাষযোগ্য করে ১৩ হাজার ৩৩৩ জন মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নের শেষাংশে সিপিএম বিধায়ক জানতে চেয়েছিলেন, এই কৃষকদের মধ্যে কত জন সরকারের বরাদ্দ ভাতা এবং দু’ টাকা কিলো চাল পেয়েছেন? মন্ত্রীর জবাব, তিন হাজার ৬১৯ জন।
মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন, সিঙ্গুরের মানুষই এক দিন জবাব দেবেন! যে কেউই গিয়ে ওখানে দেখে আসতে পারেন, জমির কী অবস্থা। আমাদের ২৮-২৯ তারিখের পদযাত্রাতেও সিঙ্গুরের মানুষ আসবেন তাঁদের কথা বলতে।’’ প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘‘মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। সিঙ্গুরে ঘোড়ার ডিমের চাষ হচ্ছে!’’ বিরোধীদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আবার কৃষিমন্ত্রী আশিসবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওরা জমি কেড়ে নিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেটাই ওদের গাত্রদাহের কারণ!’’
স্থানীয় কৃষকদের একাংশের মতে, ১০০% জমি চাষযোগ্য করার দাবি ঠিক নয়। অনেক জায়গায় চাষের কাজ শুরু করে দেখা গিয়েছে, দেড়-দুই ফুট নীচে কংক্রিট রয়েছে। সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘জমির অবস্থা প্রশাসনের নজরে আছে। যে ভাবে কাজ চলছে, তাতে খুব শীঘ্রই চাষের সমস্যা কেটে যাবে।’’ মন্ত্রীও পরে বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় আগাছা জন্মেছিল। সেগুলি সাফ করে ১০০% জমিই চাষযোগ্য করে ফেলা হয়েছে।’’ ধান, ভূট্টা-সহ নানা ফসল হচ্ছে, কারখানার জন্য তৈরি কংক্রিটের ভিত আর কোথাও নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।