Swasthya Sathi

Swasthya Sathi card: ‘অ্যাসিয়োরেন্স মোড’-এ টাকা দেবে না সরকার, স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে সঙ্কটে সরকারি হাসপাতাল

কলকাতা ও মহানগরী সংলগ্ন এলাকার মাঝারি মানের সরকারি হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী নেওয়াই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২২ ০৬:৪৪
Share:

অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের এখন সাপের ছুঁচো গেলার দশা। প্রতীকী ছবি

তৃণমূল সরকারের নানান কল্যাণ প্রকল্পের তালিকায় উজ্জ্বল পালক স্বাস্থ্যসাথী। কিন্তু ওই প্রকল্পের কার্ডে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের এখন সাপের ছুঁচো গেলার দশা। তারা না-পারছে গিলতে, না-পারছে উগরে ফেলতে। বিপাকে পড়ে কলকাতা ও মহানগরী সংলগ্ন এলাকার মাঝারি মানের সরকারি হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী নেওয়াই কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
সমস্যার সূত্রপাত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্য সরকার ‘অ্যাসিয়োরেন্স মোড’-এ সরকারি হাসপাতালকে অর্থের জোগান বন্ধ করে দেওয়ায়। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে হাসপাতালগুলিকে দু’ভাবে টাকা দেওয়া হয়। ১) ইনসিয়োরেন্স মোডে আর ২) অ্যাসিয়োরেন্স মোডে। প্রথম ক্ষেত্রে সরকার বিমা সংস্থাকে প্রিমিয়াম দেয় আর হাসপাতালকে চিকিৎসার টাকা মিটিয়ে দেয় বিমা সংস্থা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ অ্যাসিয়োরেন্স মোডে কোনও বিমা সংস্থা বা তৃতীয় পক্ষ থাকে না। সরকার সরাসরি হাসপাতালকে রোগীর চিকিৎসার টাকা মেটায়।
প্রিমিয়ামের টাকা যাতে কম দিতে হয়, সেই জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ইনসিয়োরেন্স মোডে নতুন কার্ড বেশ কিছু দিন আগেই বন্ধ করা হয়েছে। কার্ড হচ্ছে শুধু অ্যাসিয়োরেন্স মোডে। অল্পবিস্তর দেরি হলেও বেসরকারি হাসপাতালে সরকার অ্যাসিয়োরেন্স মোডে চিকিৎসার টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বছরখানেক হল, সরকারি হাসপাতালে ওই মোডে আর টাকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। কারণ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই নিখরচায় সব পরিষেবা দিচ্ছে সরকার। তাই স্বাস্থ্যসাথীর রোগীদের জন্য আলাদা টাকা মিলবে না। এতেই হাসপাতালগুলি বিপদে পড়েছে।
কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘বিনা পয়সায় চিকিৎসা প্রদান’ যে সরকারি ‘দাবি’ মাত্র, এ কথা কে না জানে! বহু ওষুধ, বিশেষত দামি ওষুধ, রিএজেন্ট, চিকিৎসাসামগ্রী সরকারি হাসপাতালে থাকে না। রোগীকে কিনতে হয়। অনেক টেস্ট বা পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয় টাকা দিয়ে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে যে-রোগী ভর্তি হবেন, তাঁকে তো সেগুলো করতে বলা যাবে না। বললে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করবেন, ‘কার্ড দেওয়া সত্ত্বেও কেন টাকা খরচ করতে হবে?’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্প নিয়ে তখন একটা হাঙ্গামা তৈরি হবে। সেটা কেউ চাইবে না। ফলে হাসপাতালকেই সেই খরচ বহন করতে হবে। কিন্তু সরকার সেই টাকা মেটাবে না। তা হলে সরকারি হাসপাতালের চলবে কী করে?
২০২১-২২ অর্থবর্ষে কলকাতায় এসএসকেএম, মেডিক্যাল, ন্যাশনাল, আরজি কর, নীলরতন ও বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি মিলিয়ে সরকারের কাছে অ্যাসিয়োরেন্স মোডে সরকারি হাসপাতালের পাওনা প্রায় ৩০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘অ্যাসিয়োরেন্স মোডে সরকারি হাসপাতালকে আর কোনও টাকা দেওয়া হবে না। সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই নিখরচায় সব ওষুধ, সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি না-থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। দরকার পড়লে এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর রোগীকে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হবে। অভিযোগ করাটা অনেকের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে!’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তার আরও বক্তব্য, এখনও সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর এমন কিছু রোগী আসেন, যাঁদের কার্ড ইনসিয়োরেন্স মোডে আছে। অর্থাৎ সেই টাকা মেটায় বিমা সংস্থা। সেই টাকা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে জমা হয়। যদি অ্যাসিয়োরেন্স মোডের রোগীদের বাড়তি ওষুধ বা পরীক্ষানিরীক্ষা দরকার হয়, ইনসিয়োরেন্স মোড থেকে পাওয়া টাকায় সেটা করতে হবে।
কিন্তু পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ইনসিয়োরেন্স মোডে প্রাপ্ত টাকার তিন গুণ বেশি খরচ হয়েছে অ্যাসিয়োরেন্স মোডের চিকিৎসায়। কলকাতার এসএসকেএম, মেডিক্যাল, ন্যাশনাল, আরজি কর, নীলরতন ও বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি মিলিয়ে ২০২১-২২ সালে ইনসিয়োরেন্স মোডে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ন’‌কোটি টাকা আর ওই সময়সীমায় ওই ছ’টি হাসপাতালে অ্যাসিয়োরেন্স মোডে পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা!
কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, ‘‘আমরা খরচ সামলাব কী করে? রোগী কল্যাণে জমা টাকা যদি স্বাস্থ্য সাথীতে বেরিয়ে যায়, তা হলে হাসপাতালের অন্য পরিকাঠামোগত ও কল্যাণমূলক কাজ কোন টাকায় হবে?’’ অন্য এক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘‘এ বার তা হলে স্বাস্থ্যসাথীতে অ্যাসিয়োরেন্স মোডে ভর্তি কোনও রোগীকে কোনও ওষুধ বাইরে থেকে কিনে দিতে হলে বা কোনও টেস্ট বাইরে করাতে হলে আমাদের স্রেফ চেপে যেতে হবে। বলা হবে না। হাসপাতালে যতটুকু ওষুধ বা পরীক্ষার সুযোগ মিলবে, তার মধ্যে যা চিকিৎসা করা যায়, ততটুকু করতে হবে।’’
কলকাতার মাঝারি সরকারি হাসপাতালগুলি এই টাকার ঝামেলা এড়াতে এক বছর ধরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রোগী নেওয়াই কার্যত বন্ধ রেখেছে। মুখে অবশ্য তারা দাবি করছে, রোগীরা নিজেরাই সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভর্তি হতে চান না। তাই রোগী কম হচ্ছে।

Advertisement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement