রেশন দোকানের সামনে লাইন। ছবি: দীপঙ্কর দে
নড়ে বসল প্রশাসন। সোমবার থেকে সিঙ্গুরের ৩৬০০ চাষির প্রাপ্য চাল ও টাকা বিলি শুরু হল। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড হলেন হুগলি জেলা খাদ্য পরিদর্শক অসীম নন্দী।
বাম আমলে টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য যে সব চাষির জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ৩৬০০ জন ক্ষতিপূরণের চেক নেননি। ওই পরিবারগুলির জন্য ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে অনুদান (মাসে ২০০০ টাকা এবং পরিবারপিছু দু’টাকা কেজি দরে ১৬ কেজি করে চাল) দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। আচমকা জুলাই মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় ওই আর্থিক সাহায্য। গত মাস থেকে মিলছিল না বরাদ্দ চালও। উৎসবের মরসুমে মাথায় হাত পড়ে ওই চাষিদের। সংবাদমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হতেই প্রশাসনের অন্দরে শোরগোল পড়ে।
সোমবার সিঙ্গুরের তিনটি এলাকা থেকে চাষিদের চালের ‘টোকেন’ বিলি শুরু করে প্রশাসন। বকেয়া সরকারি টাকাও চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে শুরু করে। দুপুরে রাজ্যের খাদ্য কমিশনার মনোজ আগরওয়াল এক নির্দেশিকায় জানান, সিঙ্গুরের চাষিরা চাল পাননি বলে জেলা খাদ্য পরিদর্শক অসীম নন্দীকে সাসপেন্ড করা হল। তাঁর জায়গায় ওই দায়িত্ব পালন করবেন আরামবাগের অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ামক।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এ দিন সিঙ্গুরে খাদ্য দফতরের ছ’জনের প্রতিনিধি দল তদন্তে গিয়েছিলেন। চাষিরা চাল না-পাওয়ায় অসীমবাবুকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি সময়ে ছাপানো ‘টোকেন’ পাননি এবং সে জন্য চাল বিলি করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা করা যেত। তাঁর সে ক্ষমতা ছিল। তিনি দায়িত্ব পালন করেননি।’’ এ নিয়ে অসীমবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা জানান, কী কারণে এত দিন চাষিদের টাকা আটকে ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘চাষিরা বকেয়া সব কিছুই পাবেন।’’
প্রাপ্য চালের ‘টোকেন’ নিতে এ দিন গোপালনগর, কেজিডি এবং বেড়াবেড়ির তিনটি জায়গায় ভিড় হয়। অনেকে ‘টোকেন’ দিয়ে রেশন দোকান থেকে চালও নেন। তাঁদেরই এক জন বেড়াবেড়ির বলরাম দাস। তিনি বলেন, ‘‘দেরি হলেও কালীপুজোর আগে চালটা পেলাম। ভাল লাগছে। তবে চালের মান আগের মতো ভাল নয়।’’ সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দুধকুমার ধাড়া বলেন, ‘‘সরকারি অনুদান পেয়ে চাষিরা খুশি। মাঝখান থেকে তাঁদের কিছু দিন দুশ্চিন্তায় কাটাতে হল।’’