Transport Service

সঙ্কট সামাল দিতে পরিবহণ নিগমকে টাকা

নিগমের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, দৈনিক ৬৫০টি বাসের প্রায় অর্ধেক, গড়ে ৩৭০টি বাস রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৮
Share:

—প্রতীকী ছবি

করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ন’মাস ধরে নাগাড়ে পরিষেবা দিলেও রাজ্য পরিবহণ নিগমের সরকারি বাসে তেমন যাত্রী নেই। অথচ বাসভাড়া থেকে আয়ের টাকাতেই নিয়মিত জ্বালানি কিনতে হয় তাদের। অর্থাভাবে জ্বালানি কিনতে না-পারায় গত ২০ দিন ধরে দিনে কলকাতা ও শহরতলির বিস্তীর্ণ অংশে বাস পরিষেবায় ব্যাপক কাটছাঁট করতে হয়েছে। এই অবস্থায় নিগমের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবার পরিবহণ নিগমের আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থের বৈঠকের পরে সুরাহার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে নবান্নের খবর। সংস্থার কর্মীদের বেতন ছাড়াও বাস পরিষেবা সচল রাখতে বাড়তি অর্থ সংস্থানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে।

Advertisement

নিগমের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, দৈনিক ৬৫০টি বাসের প্রায় অর্ধেক, গড়ে ৩৭০টি বাস রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। দুপুরের দিকে অধিকাংশ বাসের ট্রিপ বাতিল করতে হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে এসি বাস প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ডিজেলের দামবাবদ সংস্থার কাছে আইওসি বা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের বকেয়া পৌঁছেছে সাড়ে তিন কোটি টাকার কাছাকাছি। অন্য দুই রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা এইচপিসিএল এবং বিপিসিএল-কে ধরলে অঙ্কটা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। বিভিন্ন ডিপোয় তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাস পরিষেবা বাতিল করতে হচ্ছে। আপাতত সকাল এবং সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ৮০টি বৈদ্যুতিক বাস এবং কমবেশি ৩০০ বাস দিয়ে কোনও মতে পরিষেবা সামাল দেওয়া হচ্ছে।

নিগম সূত্রের খবর, দৈনিক সাড়ে ৬০০ বাস রাস্তায় নামাতে সংস্থার প্রায় চার ট্যাঙ্কার ডিজেল লাগে। গত কয়েক মাসে ডিজেলের দাম ট্যাঙ্কার-প্রতি ৮.৩৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ৮.৯০ লক্ষ টাকা হয়েছে। ফলে ডিজেল খাতে দৈনিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৫.৬ লক্ষ। অথচ যাত্রী-ভাড়া খাতে আয় মাত্র ১৬ লক্ষ টাকা। আয়-ব্যয়ের এই বিপুল ফারাকই সমস্যা তৈরি করছে।

Advertisement

লকডাউন পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য প্রায় ২৬০০ বাস চালানো হয়। নিখরচায় ওই যাতায়াতের ব্যবস্থা করার জন্য প্রায় ২.১৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নিগমের। লকডাউনে ১৩টি রুটে বিশেষ বাস চালালেও তেমন আয় হয়নি। ওই সময় বাস-পিছু মাত্র ২০ জন যাত্রী নেওয়া যেত। স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে গিয়েও পরের দিকে দিনে প্রায় ১০০ বাস চালাতে হয়েছে নিগমকে। সেই খাতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা হলেও তা হাতে পায়নি নিগম। এই অবস্থায় সরকারি সাহায্য না-পেলে নিগমের বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে নিগম সূত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অর্থ দফতরকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানায় নিগম।

অর্থসচিব তার পরেই নিগমের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আপাতত কর্মীদের বেতন ছাড়াও বাস পরিষেবা সচল রাখতে বাড়তি অর্থের সংস্থান করা হতে পারে বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর। নতুন করে টাকা এলেও পরিষেবা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতেই হবে বলে মনে করছেন নিগম-কর্তারা। করোনা পরিস্থিতিতে এখনও বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতে থেকে কাজ করছেন। পারিস্থিতি বদলের আগে পর্যন্ত যাত্রী-সংখ্যা তেমন বাড়বে না বলেই আশঙ্কা আধিকারিকদের। ‘‘বহু গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাসেই যাত্রী কমেছে। আগেকার অবস্থা কত দিনে ফিরবে, বলা মুশকিল। ফলে জরুরি পরিষেবা চালু রাখাই এখন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলেন নিগমের এক আধিকারিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement