রোজ ভ্যালি

সোনায় উপঢৌকন মন্ত্রীদের, মিলেছে হিসেবের খাতাও

বাজার থেকে তোলা টাকায় তিনি বিপুল পরিমাণ সোনাও কিনেছিলেন। আর তখনই মাথায় আসে— সোনার গয়নার ব্যবসা করলে কেমন হয়! নিজের জমানো সোনার বিস্কুট থেকে মেয়ে অদৃজার নামে ২০১৩ সালে ওই সোনার গয়নার ব্যবসা শুরু করেছিলেন রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। তদন্তে নেমে সিবিআই অফিসারেরা এখন জানতে পারছেন, সেই সোনার ব্যবসা জমে ওঠার পরে প্রভাবশালীদের শুধু টাকা নয়, সোনাও ‘ভেট’ পাঠানো শুরু করেন রোজ ভ্যালি কর্তা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

বাজার থেকে তোলা টাকায় তিনি বিপুল পরিমাণ সোনাও কিনেছিলেন। আর তখনই মাথায় আসে— সোনার গয়নার ব্যবসা করলে কেমন হয়!

Advertisement

নিজের জমানো সোনার বিস্কুট থেকে মেয়ে অদৃজার নামে ২০১৩ সালে ওই সোনার গয়নার ব্যবসা শুরু করেছিলেন রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। তদন্তে নেমে সিবিআই অফিসারেরা এখন জানতে পারছেন, সেই সোনার ব্যবসা জমে ওঠার পরে প্রভাবশালীদের শুধু টাকা নয়, সোনাও ‘ভেট’ পাঠানো শুরু করেন রোজ ভ্যালি কর্তা।

আর ঠিক যে ভাবে ডায়েরিতে তিনি পাই-পয়সার হিসেব লিখে রাখতেন, সে ভাবেই কবে কার কাছে কত সোনা পাঠিয়েছেন, তার হিসেবও রেখে দিয়েছিলেন। তবে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নয়, এই হিসেব রাখা ছিল ‘অদৃজা’র হিসেবের খাতাতেই।

Advertisement

সূত্রের খবর, জেরার মুখে রোজ ভ্যালি কর্তা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীই প্রথম সোনা ভেট-এর পরামর্শটি দেন। তদন্তকারীদের দেওয়া বয়ানে গৌতম নাকি জানিয়েছেন, সেই নেতা তাঁকে বলেছিলেন— ‘আমি আর কত টাকা নগদে নেব গৌতমবাবু? আপনার তো গয়নার ব্যবসাও রয়েছে। নগদের বদলে আমার বাড়িতে সম মূল্যের সোনার বিস্কুট বা গয়না পাঠিয়ে দেবেন!’

সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে বাইপাস সংলগ্ন একটি পাঁচতারা হোটেলের বৈঠকে রাজ্যের এক মন্ত্রীও তাঁর দফতরের পরিষেবা দেওয়ার বিনিময় গৌতমের কাছে সোনার বিস্কুট চেয়ে নিয়েছিলেন। তার পর থেকে প্রভাবশালীদের অনেককেই নগদ টাকার পাশাপাশি গৌতম সোনার বিস্কুট ও গয়না দিতে শুরু করেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।

সিবিআই জানিয়েছে, রাজ্যে তাঁর বিভিন্ন ব্যবসা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য একাধিক সরকারি দফতরের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিতেন রোজ ভ্যালি কর্তা। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, মূলত হোটেল ও পর্যটন ব্যবসা জোরদার করতে রাতারাতি বিভিন্ন দফতরের অনুমোদন ও জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়েছিল। এ কারণে গৌতম নিজেই সরাসরি নিদিষ্ট দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই জমি পেতে এলাকা ভিত্তিক রাজনৈতিক নেতাদের নগদ টাকা ও গয়নাতে নজরানা দেওয়া হয়েছিল।

সূত্রের খবর, রোজ ভ্যালি কর্তার ঘনিষ্ঠ এক হিসেবরক্ষক সিবিআইকে জানিয়েছেন, গৌতমের নির্দেশে প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রতিটি সোনার বিস্কুট ও গয়নার হিসেব নথিভুক্ত করে রাখার ব্যবস্থাও ছিল। ‘অদৃজা’র শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত কত সোনা ‘উপঢৌকন’ হিসেবে পাঠানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, হিসেবরক্ষকের বয়ান অনুযায়ী সোনা প্রাপকের তালিকায় বর্তমান মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্যও রয়েছেন। স্বর্ণ বিপণির হিসেবের খাতা থেকেও তদন্তকারীরা এই নামগুলি পেয়েছেন। তবে মন্ত্রী, সাংসদ-সহ প্রভাবশালীদের মোট কত টাকার সোনা দেওয়া হয়েছে, তার হিসেব এখনও করছে সিবিআই।

দু’বছর গৌতম জেলে। অথচ, সোনার ব্যবসা এখনও রমরমিয়ে চলছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, মেয়ের নামের এই ব্যবসা ছিল গৌতমের চোখের মণি। মুম্বই থেকে এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে উড়িয়ে এনে শুরু করেন ব্যবসা। কলকাতার একটি নামকরা স্বর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিজ্ঞ কর্মীদের অনেক বেশি বেতন দিয়ে তুলে এনেছিলেন। এই মূহূর্তে গৌতমের ঘনিষ্ঠ এক মহিলাই এই ব্যবসার মাথায় রয়েছেন বলে রোজ ভ্যালি সূত্রে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement