ঢাকের মহড়া। ঘাটালে কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
অসময়ে আয়ের মুখ দেখে ওরা খুশি। ঢাকের তালে সকলকে বিজয়োৎসবের আনন্দে বুঁদ করে রাখতে তাই ওদের এখন চরম ব্যস্ততা।
এখন অবশ্য শরৎকাল নয়। শারদোৎসবেরও ঢের দেরি। তাহলে বিজয়োৎসব কীসের? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য কিন্তু কোনও পুরস্কার নেই। আজ, শুক্রবার কলকাতার রেড রোডে রাজ্য মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। জেলায় জেলায়ও চলবে নানা অনুষ্ঠান। উৎসবে ঢাক বাজবে না, তা কি হয়? তাই এখন দম ফেলার সময় নেই ঢাকিদের।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেলিয়াতে প্রায় ৩০টি ঢাকি পরিবারের বসবাস। পুজোর সময় ব্যস্ততা থাকে। তা বলে এই ভোটের সময়! ঠাকুরদাস কালন্দি, মহাদেব কালন্দি, দীপক মিদ্যার মতো ঢাকিরা বলছেন, “এখন বিজয় মিছিলগুলোয় ডাক পাচ্ছি। সামনের কয়েকদিনও কাজ আছে। বহু বছর ধরে ঢাক বাজাচ্ছি। সাধারণত, পুজোর সময়ই ব্যস্ততা থাকে। এ বার ভোটের সময়ও ব্যস্ততা রয়েছে। এই সময়ের রোজগারটা উপরি পাওনা।” পাশাপাশি মহাদেব, দীপকেরা বলছেন, “বিজয় মিছিলে ঢাক বাজানোর আনন্দই আলাদা!”
এক- একটি বিজয় মিছিলে ঢাক বাজাতে গেলে মিলছে ৮০০- ৯০০ টাকা। গুণধর কালন্দি, দীনবন্ধু কালন্দিদের কথায়, “এই সময়ে বাড়তি দু’পয়সা রোজগারের জায়গা আছে। বছরের বেশির ভাগ সময় তো বসেই থাকতে হয়।” ২০১১ সালের জয়ের পরও পাড়ায় পাড়ায় বিজয় মিছিল হয়েছে তৃণমূলের। সেখানে কিন্তু এত ঢাক দেখা যায়নি। এ বার কেন? দলের একাংশ কর্মী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সেই অনুব্রত মণ্ডলের কথাই। ভোটের আগে বীরভূমের প্রচারে বারবার ভোটারদের ‘গুড়- জল’ খাওয়ানোর হুমকি দিতে শোনা গিয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। বলেছিলেন, বিরোধীদের জন্য ‘চড়াম- চড়াম’ ঢাক বাজবে। ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার’ বার্তা শোনা গিয়েছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও।
ওই ‘চড়াম চড়াম’-এর মানে যে অন্য কিছু নয়, ঢাকই, তা বোঝানোর জন্যই যেন এখন মরিয়া তৃণমূলকর্মীরা। জেলার এক তৃণমূলকর্মীর কথায়, “বিজয় মিছিলে তাসা- ব্যান্ডপার্টি তো থাকেই। এ বার ঢাক থাকছে। ক্ষতি কী!” শুক্রবার জেলার নানা জায়গায় যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে, তা জানাচ্ছেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ও। তাঁর কথায়, “সব এলাকায় দলের পতাকা তোলা হবে। কিছু কর্মসূচি হবে।’’ ঢাকও থাকবে? দীনেনবাবুর জবাব, “না থাকার কী আছে! ঢাকের আওয়াজ তো মন্দ নয়!”
বুধবারই মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহে তৃণমূলের বিজয় মিছিল হয়েছে। সেখানে ঢাকও ছিল। মণিদহের তৃণমূল নেতা অঞ্জন বেরা বলেন, “বিজয় মিছিলে একটু উচ্ছ্বাসহবেই। সেখানে ঢাক না- রাখলে হয়!” একই ছবি চোখে পড়েছে জেলার অন্যত্রও।
এই প্রথম নয়, ঢাকের সুদিন অবশ্য আরও একবার ফিরেছিল ২০১১ সালে পালাবদলের পর। যখন ঢাক পিটিয়ে সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচার শুরুর পরিকল্পনা করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিজয়োৎসব উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে অথবা রাতে অনেক এলাকায় খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা করছেন তৃণমূলের কর্মীরা। থাকছে স্পেশাল মেনুও! মেদিনীপুরের এক তৃণমূলকর্মীর কথায়, “উৎসবে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা তো রাখতেই হবে! শুক্রবার রাতেই পাড়ায় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করছি। দলের কর্মীরাই নিমন্ত্রিত।’’
মেনুতে কী কী থাকবে? ওই কর্মীর কথায়, “ভাত, ডাল, একটা ভাজা, একটা তরকারি থাকবে। সঙ্গে মুরগির কষা মাংস তো রাখতেই হবে!” শালবনির মতো বেশ কিছু এলাকায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সরাসরি বড়পর্দায় দেখানোর প্রস্তুতিও হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই ঘাটাল শহরের একাধিক মোড়ে শপথ অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছে দলীয় অফিসগুলি। সবুজ আবির, সবুজ মিষ্টির সঙ্গে থাকছে ঢাক। ঘাটালের ঢাকি সুকুমার রুইদাস, বাবলু মণ্ডলের কথায়, ‘‘এই ক’দিনে ঢাক বাজিয়ে এত আয় হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।” কুঠিঘাটের দুলাল দাস, দাসপুরের গোপীগঞ্জের হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘‘এত অল্প দিনে আমাদের এখন যা রোজগার হচ্ছে জীবনে কখনও হয়নি।’’
(সহ প্রতিবেদন: অভিজিৎ চক্রবর্তী)