প্রতীকী ছবি।
।১। রায়গঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বছর চব্বিশের তরুণী ইটাহারের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। নিয়মিত রায়গঞ্জের পুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে যাতায়াত করেন। অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ইটাহারের বাসিন্দা তাঁর এক সহকর্মীর ছেলের জন্মদিন ছিল। ফলে ওই দিন বাসে চেপে রায়গঞ্জে ফিরতে রাত ৯টা বেজে যায়। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘বিদ্রোহীমোড়ে বাস থেকে নেমে টাউনক্লাব লেন দিয়ে হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তা সুনসান ছিল। আচমকাই পিছন থেকে তিন যুবক একটি বাইকে চেপে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাইকের মাঝে থাকা মদ্যপ যুবক আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে পাব তিন হাজার টাকা। ভয়ে চিৎকার শুরু করলে তারা বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।’’
।২। এ বছর দুর্গাপুজোর দশমীর রাতে রায়গঞ্জ শহরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলাকালীন বকুলতলা মোড়ে মদ্যপ অবস্থায় এক যুবক এক তরুণীকে যৌননিগ্রহ করে বলে অভিযোগ। তরুণী প্রতিবাদ করায় অভিযুক্ত যুবক ও তাঁর সঙ্গীরা তরুণীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই দিনই তরুণী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পরের দিন মূল অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের ইভটিজ়িং ঘটছে। রাত ৯টার পরে শহরজুড়ে মদ্যপ যুবকেরা বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালান। বেশি রাতে মহিলারা কসবা, দেবীনগর, শিলিগুড়িমোড়, সুদর্শনপুর, বন্দর, কাঞ্চনপল্লি, মিলনপাড়া, এফসিআই মোড়, শক্তিনগর, অশোকপল্লি, মোহনবাটী, নিশিথসরণি, শিল্পীনগর, উকিলপাড়ার ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় বার হওয়ার সাহস পান না। এ ছাড়া গার্লস হাইস্কুল, পার্বতীদেবী বালিকা বিদ্যালয়, টেন ক্লাস গার্লস হাইস্কুল, দেবীনগর কৈলাসচন্দ্র রাধারাণি বিদ্যাপীঠের সামনে স্কুল শুরু হওয়ার মুখে ও ছুটি হওয়ার পরেও ‘রোমিয়ো’-রা ভিড় জমায়। তারা ছাত্রীদের ইভটিজ়িং করে বলেও অভিযোগ।
এর আগে দিনেদুপুরে শহরে ধর্ষণেরও অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের ৯ জুলাই করণদিঘির রসাখোয়ার বাসিন্দা ১২ ও ১৪ বছর বয়সী অষ্টম শ্রেণির দুই আদিবাসী নাবালিকা ও ইটাহারের মহানন্দপুর এলাকার বাসিন্দা দুই আদিবাসী তরুণী রায়গঞ্জ পুর বাসস্ট্যাণ্ড চত্বরে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার যাত্রিবাহী গাড়ি ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেই সময় ওই নয় যুবক তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে খুনের হুমকি দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে ও পানশালার উপরে নিয়ে গিয়ে যৌননিগ্রহ ও ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আদিবাসী বাসিন্দারা বাসস্ট্যান্ডে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটান।
হাতিয়া হাইস্কুল ও কৈলাসচন্দ্র রাধারানি বিদ্যাপীঠের দুই প্রধানশিক্ষক গৌতম সিংহ ও উৎপল দত্তের বক্তব্য, পুলিশের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জেলাজুড়ে খাকি ও সাদা পোশাকে পুরুষ ও মহিলা পুলিশকর্মীদের পর্যাপ্ত নজরদারি রয়েছে।’’