ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট লিগ্যাল এড সার্ভিসেস অথরিটি-র অনুষ্ঠানে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।—নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের চার জেলায় মেয়ে পাচারের সংখ্যা বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর।
শনিবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট লিগ্যাল এড সার্ভিসেস অথরিটি’-র এক আলোচনা সভায় তিনি জানান, জলপাইগুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মেয়ে পাচারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রধান বিচারপতির কথায়, ‘‘তার মানে এই নয় যে রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতে নারীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে না। আসলে সব ঘটনা নথিভূক্ত হচ্ছে না। হতে পারে, এর পিছনে কোনও কারণ রয়েছে। এ ও হতে পারে, নির্যাতিতা মহিলারা তাঁদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে সাহস পাচ্ছেন না।’’
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে একাধিক বার ফোন করা হয় রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাকে। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব মেলেনি।
‘লিগ্যাল এড সার্ভিসেস অথরিটি’-র সদস্য-সচিব অভিজিৎ সোম জানান, মহিলাদের উপর সংগঠিত অপরাধ ও পাচার আটকানো এবং নির্যাতিতাদের সুবিচার, পুনর্বাসন ছিল এ দিনের আলোচনা সভার বিষয়বস্তু। অনুষ্ঠানে সিআইডি-র পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির হাতে নারী পাচার ও নারীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে একটি রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। সেই রিপোর্ট অবশ্যপ্রকাশ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতিতাদের পাশে তাঁদের পরিবার, বাবা-মাও থাকছেন না। রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজ কল্যাণ দফতর, পুলিশ-প্রশাসন, পঞ্চায়েত, এমনকী আদালতেও তাঁদের সুবিচার পেতে অসুবিধা হয়।
আলোচনা সভায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই নির্যাতিতা কিশোরীকে হাজির করানো হয়। ওই দু’জনেই এক সময়ে ভিন রাজ্যে পাচার হয়ে গিয়েছিল। পরে বাড়ি ফিরে এলেও তাদের আতঙ্ক কাটেনি। বাড়ির লোকেরাই তাদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ।
নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানায় দুই কিশোরী। উত্তর ২৪ পরগনার কিশোরীকে বিয়ের নামে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার অছিলায় বিয়ের কয়েক মাস পরে তার স্বামী ও শাশুড়ি তাকে পুণেতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। সেখানকার যৌনপল্লিতে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হওয়ার পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে তাকে দিয়ে আর ব্যবসা সম্ভব নয় বুঝে পাচারকারী দলের কয়েক জন তাকে ট্রেনে চাপিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ফেরার আগে পুনের পুলিশের কাছে এফআইআর করে মেয়েটি।
ওই কিশোরী এ দিন প্রধান বিচারপতির সামনেই জানায়, পুণের আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারও শুরু হয়। সে বাড়ি ফেরার পরে পুণের আদালতে কয়েক বার সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানকার আদালতে নিয়মিত হাজির হতে পারবে না বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের কাছে লিখিত ভাবে জানায়। বিচারক উল্টে তাকে জানান, আদালতে গরহাজির থাকলে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে সাক্ষ্য দিতে পুণে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধান বিচারপতি এ দিন ওই কিশোরীকে আশ্বাস দেন, বিচারের সাক্ষ্যদান পর্ব যাতে এখান থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে করানো যায়, সেই ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন তিনি।