প্রতীকী ছবি।
পৃথক রাজ্যের দাবিতে জোট বেঁধে আন্দোলনের হুমকি দিল গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এবং কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি)। রবিবার জলপাইগুড়িতে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেছেন গ্রেটার কোচবিহারের বংশীবদন বর্মণ এবং কেপিপির সভাপতি অতুল রায়। পৃথক রাজ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তথা এনআরসি প্রয়োগ করার প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠাবে যৌথ মঞ্চ। উত্তরবঙ্গের সব জেলার সদরে মিছিল করে জেলাশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
বংশীবদন এবং অতুল দু’জনেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কমিটি বা বোর্ডে রয়েছেন। দু’জনেই এ দিন দাবি করেছেন, কোনও বোর্ড থেকে তাঁরা সরছেন না, তবে রাজ্য সরকার যদি সরিয়ে দেয় তাতে তাঁদের কিছু বলার নেই। পৃথক রাজ্যের কথা বলা, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি অথবা বিজেপির সুরে এনআরসি প্রয়োগের দাবি তুলে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের উপরে চাপ বাড়ানোই তাঁদের উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভও জানিয়েছেন বংশীবদন। তাঁর কথায়, “রাজবংশীদের ভোটে জিতে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতায় বসে আমাদের ভুলে গিয়েছেন। এ বার থেকে আমাদের ভোটব্যাঙ্ক আমরাই সামলাব।” কেন্দ্রে স্মারকলিপি পাঠানোর পরে মাস কয়েক অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ। তারপরেও দাবিপূরণ না হলে লাগাতার রেল বা রাস্তা অবরোধের হুমকিও দেওয়া হয়েছে এ দিন।
গ্রেটার বা কেপিপি দুই সংগঠনই কিছু দিন যাবত পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন না করে ভাষার স্বীকৃতি, পাঠ্যক্রম চালু ইত্যাদি নিয়ে তৎপর ছিল। বংশীবদন রাজ্যের রাজবংশী উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমিতে রয়েছেন। অতুল কামতাপুরী ভাষা অ্যাকাডেমির সহ সভাপতি। হঠাৎ করে দুই সংগঠনের এক হয়ে গিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা করার নেপথ্যে বিজেপির কৌশল দেখছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “বিজেপি আড়াল থেকে উস্কানি দিচ্ছে।”
কেপিপি নেতা অতুল অবশ্য বলেন, “কেন্দ্র, রাজ্য উভয় শাসক দলকেই আমরা বার্তা দিতে চাইছি। রাজবংশীদের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার অনেক পদক্ষেপ করেছে। তবে এ বার আমরা নিজেদের অধিকার সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি।” এতদিন গ্রেটার পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করেছে, কেপিপি আন্দোলন করেছে কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে। দুই সংগঠন এক হয়ে ভূমিপুত্র ঐক্য মঞ্চ তৈরি করেছে। বংশীবদন বললেন, “আমাদের দাবি পৃথক রাজ্য। সে রাজ্যের নাম গ্রেটার কোচবিহারও হতে পারে আবার কামতাপুরও হতে পারে। নাম নিয়ে আমাদের ছুঁতমার্গ নেই।” উত্তরবঙ্গের ‘ভূমিপুত্র’দের সব সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনতে উদ্যোগী হয়েছেন বংশীবদন-অতুলরা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিনয় বর্মণের মন্তব্য, “আলাদা রাজ্যের দাবি অস্থিরতা তৈরি করবে। সবাইকে বলব, অস্থিরতা তৈরি হয় এমন সব কিছু থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নে শামিল হতে।’’