সুবীর চাকী খুনে জোরকদমে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ফাইল চিত্র।
গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডে জোড়া খুনের মূল চক্রী মিঠু হালদারের পরামর্শেই তারা বাড়ি ছেড়ে পাথরপ্রতিমার অতি-সঙ্কীর্ণ অঞ্চলে লুকিয়ে ছিল বলে জেরায় কবুল করেছে বাপি মণ্ডল ও জাহির গাজি। পুলিশের সন্দেহ, কর্পোরেট-কর্তা সুবীর চাকী এবং তাঁর গাড়িচালক রবীন মণ্ডলের হত্যাকাণ্ডে পরে অন্যতম মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদারও সুন্দরবনের কোনও প্রান্তে লুকিয়ে রয়েছে। তার হদিস পেতে তল্লাশি চালানো হয় রবিবারেও। তবে খুনের ঠিক পরে ভিকি আর তার এক সঙ্গী ডায়মন্ড হারবারেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিল বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশি সূত্রের খবর, ১৭ অক্টোবর, হত্যাকাণ্ডের সময় বাপি, জাহির, ভিকি ছাড়াও আরও দুই যুবক অকুস্থলে ছিল। মিঠু ছিল দূরে। খুনের পরে তিন অভিযুক্ত বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, দু’দিন বাড়িতে থাকার পরে মিঠু সকলকে পালিয়ে গিয়ে আলাদা আলাদা জায়গায় লুকিয়ে থাকতে বলে। তদন্তকারীরা জানান, মিঠুর পরামর্শে বাপি ও জাহির পাথরপ্রতিমার প্রত্যন্তে গা-ঢাকা দেয়। অন্যেরা আলাদা হয়ে যায়। রাতভর তল্লাশিতে বাপি-জাহির গ্রেফতার হলেও ভিকি এখনও গোয়েন্দাদের নাগালের বাইরে। বাপি ও জাহিরের সঙ্গে মিঠু আর যাকে নিয়ে এসেছিল, সে-ও পলাতক। মিঠু ধরা পড়লেও ভিকির সঙ্গে থাকা যুবক অধরা।
দীর্ঘ জেরার পরে পুলিশ জানাচ্ছে, বাপি এর আগে চুরির অভিযোগে ধরা পড়েছিল। জেরার মুখে বাপি-জাহির পুলিশকে জানায়, বালিগঞ্জে একটি বাড়ি সারানোর কথা বলে মিঠু তাদের নিয়ে এসেছিল। পরে তারা জানতে পারে, তাদের আনা হয়েছে ডাকাতির জন্য। বাপি-জাহিরের দাবি, ভিকি এবং তার এক সঙ্গী মিলে সুবীরবাবু ও রবীনবাবুকে গলা কেটে খুন করেছে। সেই কাজে সাহায্য করেছে বাকিরা। লালবাজার সূত্রের খবর, প্রথমে রবীনবাবুকে তেতলার চিলেকোঠার ঘরে খুন করে ভিকি এবং তার দলবল। পরে দোতলায় নেমে সুবীরবাবুকে খুন করে তারা। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, এক জন মুখ চেপে ধরে কর্পোরেট-কর্তার। বাকি দু’জন তাঁর হাত ও পা চেপে ধরার পরে খুন করা হয়। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির দাপট কমে যাওয়ার পরে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
তদন্তকারীরা জানান, আলাদা ভাবে জেরার সময় বাপি-জাহিরের কথাবার্তায় নানান অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ভিকি গ্রেফতার না-হলে সেই অসঙ্গতির নিরসন হবে না। জটও পুরো কাটবে না। বাপি-জাহির বলেছে, খুনের ছক কষেই ভিকি ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। সে ঢুকেই রবীনবাবুকে তেতলায় নিয়ে গিয়ে খুন করে। গোয়েন্দারা তাদের পুরো বক্তব্য বিশ্বাস করছেন না। তাঁদের সন্দেহ, জোড়া খুনে ওই পাঁচ জনেই জড়িত। তবে ভিকি এবং তার সঙ্গীর ভূমিকা বেশি থাকতে পারে। খুনের জন্য ভিকি যে তাদের এলাকা থেকেই ছুরি বা কাটারি জাতীয় কিছু কিনেছিল, সেটা পরিষ্কার। জট কাটবে ভিকি বা অকুস্থলে উপস্থিত অন্য অভিযুক্ত ধরা পড়ার পরে। গোয়েন্দারা এখন ওই দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টাই চালাচ্ছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, ভিকির হাতে টাকা বিশেষ নেই। তাই বেশি দিন লুকিয়ে থাকতে হলে টাকার জন্য কারও দ্বারস্থ হতে হবে তাকে। সব দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের পর দিন কলকাতায় এসেছিল ভিকি। যে নির্মাণকারী সংস্থার সুপারভাইজারের কাজ করতো ভিকি সেই সংস্থার টালিগঞ্জের অফিসে যায় সে। গিয়ে বলে তারা বাবা মারা গেছে তাই টাকার দরকার। সেখান থেকে দেড় হাজার টাকা নেয় এবং তিনদিন পরে কাজে আসবে বলে এলাকা ছাড়া ভিকি।