বাবুঘাটে অস্থায়ী ক্যাম্প চত্বরে গঙ্গাসাগরমুখী যাত্রীদের ভিড়। উধাও কোভিড-বিধি। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লক্ষাধিক পুণ্যার্থী ইতিমধ্যে এসে গিয়েছেন। বিশাল মেলা প্রাঙ্গণে ভিড়টা এখনও সে অর্থে উপচে পড়েনি ঠিকই, কিন্তু জমায়েত, ঠেলাঠেলির ছবি বহু জায়গায়। বিশেষ করে, কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাট, সাগরের কচুবেড়িয়ার মতো জায়গায় গাদাগাদি ভিড় দেখা গেল বুধবারও। ভেসেল, বাসেও ভিড় ছিল ভালই।
মঙ্গলবারই গঙ্গাসাগর মেলার নজরদারি কমিটি তৈরি করে দিয়েছে হাই কোর্ট। করোনা পরিস্থিতিতে বিধি মেনে মেলা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখবে কমিটি। কমিটির দুই সদস্য, প্রাক্তন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্যের লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য সচিব রাজু মুখোপাধ্যায় এদিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতাল, মেলার জন্য তৈরি অস্থায়ী হাসপাতালও ঘুরে দেখেছেন তাঁরা।
বুধবার সন্ধ্যায় কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক ছাড়াও রাজ্যের দুই মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা ও শশী পাঁজা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। তবে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মেলার কয়েকটি বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কমিটি। কমিটির সদস্যরা চলে যাওয়ার পরে ফের বৈঠকে বসেন প্রশাসনের কর্তারা।
এমনিতে সকালে কপিলমুনি মন্দির প্রাঙ্গণে গায়ে গা ঠেকিয়ে পুণ্যার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিয়েছেন। থার্মাল চেকিং দেখা যায়নি। নাকের নীচে মাস্ক ঝুলতে দেখলে কাউকে কাউকে সতর্ক করে দিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীরা— তৎপরতা বলতে চোখে পড়েছে এটুকুই।
তবে নজরদারি কমিটির সদস্যেরা আসছেন— দুপুরের দিকে খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই একটা নড়াচড়া লক্ষ করা গেল প্রশাসনিক স্তরে। বেলা ৩টের পর থেকে বাড়ল নজরদারি। ভিড়ের দিকে তেড়ে গেলেন পুলিশ কর্মীরা। চোখে পড়ল, মেলা প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবকেরা ‘দূর হঠো দূর হঠো’ বলে চিৎকার করে বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত ভাঙার চেষ্টা করছেন। সকাল থেকে লুকিয়েচুরিয়ে অনেকে নেমে পড়েছিলেন সমুদ্রে। দুপুরের পরে তোয়ালে-গামছা নিয়ে জলে নামার তোড়জোড় করতে দেখলে পুণ্যার্থীদের চোখ পাকিয়ে শাসন করেছেন প্রশাসনের কর্মীরা।
চলছে নজরদারি কমিটির বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।
দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি ছিল। কমিটির দুই সদস্য বিকেলের দিকে মেলা প্রাঙ্গণে আসেন। মেলা পরিকাঠামো ঘুরে দেখেন। কোভিড হাসপাতাল, আইসোলেশন কেন্দ্র এবং কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থাপনাও খতিয়ে দেখেন তাঁরা। মন্দির চত্বর, সমুদ্রতটেও যান। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে আদালতের স্থির করে দেওয়া বিধিভঙ্গ না হয়। কাকদ্বীপ লট ৮ ঘাটের পরিস্থিতিও দেখেন তাঁরা। পরে তাঁরা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
ইতিমধ্যে বিকেলের দিকে প্রশাসনের উদ্যোগে কপিল মুনির মন্দির থেকে সাগরতট পর্যন্ত শোভাযাত্রা বেরোয়। পঞ্চাশ জনের বেশি জমায়েত ছিল সেখানে। তবে মাস্ক পরতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “এখনও সে ভাবে পুণ্যার্থীরা আসেননি সাগর মেলায়। আমরা আশাবাদী, গত বছরের মতো এ বারও তিরিশ লক্ষের মতো মানুষ সাগরে আসবেন। আমরা সেই মোতাবেক সমস্ত প্রস্তুতি রেখেছি।”
জেলাশাসকের দাবি, দুটো ডোজ়ের ভ্যাকসিনের নথি, বা কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কাকদ্বীপ থেকে কচুবেড়িয়া— সমস্ত জায়গায় ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ দিন সাগরে আসেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার সমস্ত বিধি মেনে মেলার আয়োজন করেছে। এ দিন কমিটির সদস্যেরা স্থানীয় হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন।”
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গঙ্গাসাগরে জনসমাগম নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক নয় বলে অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। অনেকেই চাইছেন, আদালত নিযুক্ত কমিটির নজরদারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা চলুক। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডল বলেন, “দু’জনের কমিটির পক্ষে এত বড় মেলায় নজরদারি চালানো কার্যত অসম্ভব। তা-ও চাইব, কমিটির সদস্যেরা যেন শেষ দিন পর্যন্ত থেকে সব কিছু নজরে রাখেন। না হলে আগামী দিনে আমাদেরই বিপদে পড়তে হবে।”
বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদ্যোৎ বৈদ্য বলেন, “কমিটির সদস্যেরা একদিন থেকে ফিরে গেলে নজরদারি আবার ঢিলেঢালা হয়ে যাবে। বিধি মেনে মেলা পরিচালনা করতে হলে শেষ পর্যন্ত কমিটির সদস্যদের এখানে থাকতে হবে।” আমরা আশাবাদী, গত বছরের মতো এ বারও তিরিশ লক্ষের মতো মানুষ সাগরে আসবেন। সেই মোতাবেক সমস্ত প্রস্তুতি রেখেছি।”
জেলাশাসকের দাবি, দুটো ডোজ়ের ভ্যাকসিনের নথি, বা কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কাকদ্বীপ থেকে কচুবেড়িয়া— সমস্ত জায়গায় ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ দিন সাগরে আসেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার সমস্ত বিধি মেনে মেলার আয়োজন করেছে। এ দিন কমিটির সদস্যেরা স্থানীয় হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন।”
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গঙ্গাসাগরে জনসমাগম নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক নয় বলে অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডল বলেন, “দু’জনের কমিটির পক্ষে এত বড় মেলায় নজরদারি চালানো কার্যত অসম্ভব। তা-ও চাইব, কমিটির সদস্যেরা যেন শেষ দিন পর্যন্ত থেকে সব কিছু নজরে রাখেন।” বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রদ্যোৎ বৈদ্য বলেন, “কমিটির সদস্যেরা একদিন থেকে ফিরে গেলে নজরদারি আবার ঢিলেঢালা হয়ে যাবে। বিধি মেনে মেলা পরিচালনা করতে হলে শেষ পর্যন্ত কমিটির সদস্যদের এখানে থাকতে হবে।”