সাগরমেলা সেজে উঠছে এই ধরনের নৃত্য-ভাস্কর্যে। —নিজস্ব চিত্র
কোথাও ভরতনাট্যমের নৃত্যচ্ছন্দ মূর্ত হয়েছে ভাস্কর্যে। কোনও কোনও মুরাল বা প্রাকার-ভাস্কর্যে রূপ ধরেছে ওড়িশি বা কত্থক। আবার কোথাও অসমের বৈষ্ণব নৃত্যশৈলী সত্রীয়ার প্রদর্শন।
স্থায়ী ইমারতের মধ্যে নৃত্যের কোনও প্রদর্শশালা নয়। ভারতের বিচিত্র নৃত্যকলা এমন রূপ ধরছে এ বারের গঙ্গাসাগরে। মেলার মাঠের চেহারাটাই তাতে বদলে গিয়েছে আমূল। গঙ্গাসাগরকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষক করে তুলতে মাঠের চার পাশ সাজানো হয়েছে পৌরাণিক ভাস্কর্যে। সাগরসঙ্গমে ডুব দিয়ে পুণ্যার্জনের পাশাপাশি কপিল মুনির মন্দির ঘিরে ভাস্কর্য এবং বর্ণময় আলোকসজ্জা এ বার পর্যটকদের কাছে বাড়তি পাওনা।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের আটটি মূল রূপ— ভরতনাট্যম, কুচিপুড়ি, কথাকলি, মণিপুরী, মোহিনী আট্যম, কত্থক, ওড়িশি ও সত্রীয়ার অসাধারণ সম্মিলন ঘটেছে সাগরমেলার অপরূপ ভাস্কর্য-সম্ভারে। প্রতিটি ধ্রুপদী নৃত্যের ভাস্কর্যের নীচে সংক্ষিপ্ত বিবরণী। এক লহমায় যা পড়ে পর্যটকেরা ভারতীয় নৃত্যসংস্কৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারবেন। সাগরমেলার মাঠের আকর্ষণ বাড়াতে গত বছরেই কপিল মুনির আশ্রমের পাশে উদ্বোধন হয়েছে মুরাল পার্কের। বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় লেখা হয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার কথায়, ‘‘পর্যটকদের কাছে গঙ্গাসাগরকে বছরভর আকর্ষক করে তুলতেই আমাদের এই প্রয়াস।’’
আরও পড়ুন: বর্ষবরণের রাতে দত্তপুকুরে বাড়ি ঢুকে ‘গণধর্ষণ’
কপিল মুনির আশ্রমের কাছেই রয়েছে একটি পুকুর। সেটি সংস্কার করে রকমারি বাহারি ফুলের গাছ লাগিয়ে সাজানো হয়েছে তার চার পাশ। পুকুরের মাঝখানে মা গঙ্গার মূর্তি। তাকে ঘিরে বহুবর্ণের আলোর ফোয়ারা। পুকুরের পাড়ে পর্যটকদের বসার আসন। মেলার মাঠে ফাইবারের তৈরি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তিও সন্ধ্যায় উদ্ভাসিত হবে মায়াবী আলোয়। গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘সাগরস্নান, কপিল মুনির মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি একসঙ্গে বহু তীর্থভ্রমণের আনন্দ পাবেন পুণ্যার্থীরা। বিশেষ পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে বিশ্বে ঠাঁই পাবে গঙ্গাসাগর।’’
গঙ্গাসাগরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, বছর দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ‘রূপসাগর’, ‘ঢেউসাগর’ ও ‘ভোরসাগর’-এর পাড়ে অপরূপ ঝাউবন পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। পর্যটক টানতে সাজানো হয়েছে ওই সব এলাকা। সেই সঙ্গে ‘বেণুবন’-এর ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অনাবিল সৌন্দর্য আর পরিযায়ী পাখির ভিড় পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। ওই সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য পর্ষদের তরফে বিশেষ পরিবহণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।