দিলীপ ঘোষের উপর হামলার প্রতিবাদে নেমে পুলিশের সঙ্গে ধস্তধস্তিতে জড়ালেন বিজেপি কর্মীরা। বুধবার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রাতঃভ্রমণের পরে চায়ের আড্ডায় বসতে গিয়ে ফের হামলার মুখে পড়লেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে রাজ্য জুড়ে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। কলকাতায় হাজরা মোড়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং জেলায় জেলায় নানা জায়গায় পুলিশ তাদের মিছিলে বাধা দেয়। নবান্ন অভিযান করতে গেলে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপরে বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করে পুলিশ। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সবই ’রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটক’।
সল্টলেকের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে সোমবার নিউটাউনের জোতভীম এলাকায় একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে উঠে গিয়েছেন দিলীপবাবু। সেখান থেকে বেরিয়ে বুধবার প্রাতঃভ্রমণ সেরে কোচপুকুর এলাকার একটি বাজারে চা খেতে যান দিলীপবাবু। সেখানে ‘চায়ের আড্ডা’র জন্য থানাকে জানিয়ে কয়েকটি চেয়ার পেতে ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল। বিজেপির অভিযোগ, দিলীপবাবু সেখানে পৌঁছনোর আগেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের কর্মীদের উপর চড়াও হয়, চেয়ার-টেবিল ভাঙে এবং ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেয়। পরে দিলীপবাবুও বাজারে ঢোকার মুখে দুষ্কৃতীদের বাধার মুখে পড়েন। তাঁর গাড়ি-সহ একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
ঘটনার খবর শুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে ফোন করে খবর নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিলীপবাবু পরে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, চিন্তা করার মতো কিছু হয়নি। ও রোজ হয়ে থাকে আমাদের!’’
দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমি বাজারে ঢোকার সময় কয়েক জন ষণ্ডা গুন্ডা পথ আটকে বলে, আপনি কেন বাজারে যাবেন? আমি বলি, বাজারে চা খেতে যাব, অনুমতি নিতে হবে নাকি? ওরা বলে, সামাজিক দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। অথচ ওদের কারও মুখে মাস্ক ছিল না!’’ ঘটনার পর হেঁটে বাজারে ঘোরেন দিলীপবাবু। তখনও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে দলীয় পতাকা ছিল না। তবে তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরা ওখানকার ডেপুটি মেয়রের ঘনিষ্ঠ। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আসলে এটা বাহানা। আমি যে দিন এখানে থাকতে এসেছি, সে দিন থেকেই তৃণমূলের লোকেরা এসে হুমকি দিচ্ছে। যাদের জমিদারি নষ্ট হওয়ার ভয় হয়েছে, তারাই এ সব করছে!’’
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীদের বিরাট দল নিয়ে থাকবেন বলে দিলীপবাবু ১২ ঘরের ফ্ল্যাটে উঠে এসেছেন। কে বা কারা ভয় পেয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে! ১২ ঘরের মালিক কোথায় প্রাতঃভ্রমণে যাবেন, তৃণমূল কেন ভয় পেতে যাবে? তৃণমূলের কাউকে ভয় পাওয়ার নেই, হামলা করারও প্রয়োজন নেই।’’ বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘দিলীপবাবু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়াচ্ছেন। তবে দিলীপবাবু ওখানে গিয়েছিলেন কুখ্যাত সমাজবিরোধীদের নিয়ে। যাদের মানুষ পছন্দ করে না।’’ বস্তুত, এ দিন ওই এলাকার দুষ্কৃতী ভজাই ছিল দিলীপবাবুর সঙ্গে। অন্য দিকে, মহসিন গাজী নামে এক জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বিজেপি কর্মী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের দাবি, মহসিন তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতী।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন, বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ তাঁদেরও আছে। কিন্তু বিরোধীদের উপরে হামলা গণতন্ত্রে মানা যায় না। বরং, বারবার এ ভাবে হামলা করে দিলীপবাবুদেরই সুবিধা হচ্ছে বলে তাঁদের মত।