চালু: নতুন প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল শুরু হল খড়্গপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
লোকাল ট্রেন হোক বা দূরপাল্লার মেল-এক্সপ্রেস, দেরির অপবাদ যেন ঘোচার নয় রেলের! কিন্তু চাইলে তারাও যে পারে, রবিবার দেখা গেল খড়্গপুরে। ঘড়ি ধরে ঠিক দু’ঘণ্টা আগেই নতুন প্রযুক্তি বসানোর কাজ কাজ শেষ করে দিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা। আর সঙ্গে সঙ্গেই নতুন সলিড স্টেট ইন্টারলকিং প্রযুক্তির সাহায্যে শুরু হয়ে গেল খড়্গপুরের ট্রেন চলাচল। কথা রাখলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা।
রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে ওই নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে চালানো হয় একটি মালগাড়ি। রেল সূত্রের খবর, ওই প্রযুক্তি বসানোর চূড়ান্ত পর্বের কাজের জন্য ঘোষণা অনুযায়ী সারা দিন ট্রেন বন্ধ ছিল। তবে কাজ শেষের পরে রাতে যে-সব ট্রেনের চলাচল করার কথা ছিল, তার সব ক’টিই ঠিকমতো চলেছে। আজ, সোমবারেও ভোর থেকে সব ট্রেনই ঠিকমতো চলাচল করবে। রেলকর্তাদের দাবি, এত বড় একটা কর্মকাণ্ড এশিয়ার মধ্যে এই প্রথম।
রেল সূত্রের খবর, এই কাজের ফলে প্রায় তিন দশক পরে খড়্গপুর ও সংলগ্ন এলাকার পয়েন্ট সিগন্যাল ব্যবস্থার বদল হল। সলিড স্টেট ইন্টারলক প্রযুক্তির দৌলতে এই জংশন স্টেশন থেকে তিন দিকের লাইনে ট্রেন চলাচলে অনেকটাই গতি বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে যাত্রী-সুরক্ষাও বেড়ে যাবে অনেকখানি।
‘‘নতুন প্রযুক্তি বলে ট্রেন চলাচলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোটখাটো ত্রুটিও দেখা দিতে পারে। তাই সিগন্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের গোটা দলটিকে খড়্গপুর স্টেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে অসুবিধা দেখা দিলেই শীঘ্র তা মেরামত করা যায়,’’ বলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ।
সলিড স্টেট ইন্টারলক প্রযুক্তিটা আসলে ঠিক কী?
রেলের ব্যাখ্যা, স্টেশন, বিশেষত জংশন স্টেশন থেকে ট্রেন কোন লাইন দিয়ে যাবে, কম্পিউটারের মাধ্যমে যে-প্রযুক্তি সেটা ঠিক করে দেয়, তারই নাম সলিড স্টেট ইন্টারলক প্রযুক্তি। আগে রেলের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা হাতে হাতে এই কাজ করতেন। এখন কম্পিউটার রুমে বসে মাউসের সাহায্যে সেই কাজ পরিচালনা করবেন মুষ্টিমেয় কর্মী। বিমানের ক্ষেত্রে এটিসি বা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল যে-ভূমিকা পালন করে, সলিড স্টেট ইন্টারলক প্রযুক্তির দায়িত্ব অনেকটা তেমনই। যে-কোনও স্টেশন আসার আগেই দেখা যায়, একটি লাইন থেকে অনেক লাইন বেরিয়ে গিয়েছে। স্টেশন শেষ হওয়ার পরে ওই সব লাইন আবার মিলিত হয়ে একটি লাইনেই চলে এসেছে। আর যদি স্টেশনের আশেপাশে মালগাড়ির ইয়ার্ড থাকে, তা হলে লাইনের সংখ্যা আরও বেশি হয়। জংশন স্টেশন হলে বিভিন্ন দিকে লাইন যায়। খড়্গপুর সেই ধরনেরই একটি জংশন স্টেশন। রয়েছে ইয়ার্ড এবং বিভিন্ন রুট নিয়ে কয়েকশো লাইন। সেই সব লাইনের মধ্যে ঠিক কোনটি দিয়ে ট্রেন এগোবে এবং ওই সময়ে আর কোনও ট্রেন যাতে ওই ট্রেনটির লাইনে ঢুকে পড়তে না-পারে, নতুন প্রযুক্তিতে এখন মূলত সেই কাজটিই নিমেষে কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে।
রেল যে ওই প্রযুক্তি বসানোর কাজটা নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই শেষ করতে পেরেছে, তাতেই খুশি আমজনতা। শুরু হয়েছিল ৫ নভেম্বর। ১৬ তারিখ পর্যন্ত একটু-আধটু অসুবিধা হয়েছে। তবে ওই কাজের জন্য শেষের তিন দিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ট্রেন চলাচল অনেকটাই মার খেযেছে। ১৭, ১৮ এবং ১৯ নভেম্বর অনেক লোকাল তো বটেই, দূরপাল্লার ট্রেনও বাতিল করা হয়। রবিবার সারা দিন ওই শাখায় ট্রেন বন্ধ ছিল।
খড়্গপুর দিয়ে এখন যাত্রিবাহী (লোকাল ও দূরপাল্লা) এবং মালগাড়ি মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৩০০ ট্রেন যাতায়াত করে। রেলকর্তারা জানান, নতুন ব্যবস্থায় একই সংখ্যক লাইনে খড়্গপুর থেকে নতুন প্রায় ৮০০টি রুট খুলে যাবে। ফলে খড়্গপুরের ইয়ার্ড থেকে মালগাড়ির সঙ্গে সঙ্গে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকেও যাতায়াত করাতে অনেক সুবিধা হবে।
এ দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খড়্গপুরে ট্রেন বন্ধ রাখার কথা ছিল। ফলে সকাল থেকেই খড়্গপুর স্টেশন ছিল সুনসান। রবিবার কিছু ট্রেন বালিচক, হিজলি ও কলাইকুন্ডা থেকে চালানোর কথা ছিল। তবে ওই সব স্টেশনের কোথাও তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। সোমবার ট্রেন ঠিকমতো চলবে কি না, তা জানতে এ দিন অনেক যাত্রী স্টেশনে যান। নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগেই ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, দৈনিক সময় মেনে ট্রেন চলাচলে রেলের এমন তৎপরতা বা দায়িত্ববোধ দেখা যায় না কেন?