—ফাইল চিত্র।
বিশ্বভারতী দিনের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়। পড়াশোনা, গবেষণার প্রতিষ্ঠান। পাঁচিল থেকে নানা বিষয়ে সম্প্রতি জোর চর্চা, বিতর্ক হলেও শিক্ষা ও শিক্ষা সংক্রান্ত মূল বিষয়গুলিই অবহেলিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন পড়ুয়া, প্রাক্তনী ও অধ্যাপকদের একাংশ।
বিশ্বভারতীর নিজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০ এপ্রিল থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত আশেপাশের অঞ্চলে ত্রাণ বিলি বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ লক্ষ ৯ হাজার ২২০ টাকা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশেষ ত্রাণ তহবিল ও মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ৮০ লক্ষেরও বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করলেও অনলাইন পড়াশোনার উন্নতির ক্ষেত্রে বা দরিদ্র পড়ুয়া ও তাঁদের পরিবারের উন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্বভারতী কোনও নজর দেয়নি বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। কিছু অধ্যাপকদের আবার মত, রবীন্দ্রনাথের আদর্শ মেনে বিশ্বভারতী আশেপাশের গ্রামগুলির সঙ্কটে পাশে দাঁড়াবে তা সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আগে পড়ুয়াদের কথা এবং ভবিষ্যত শিক্ষা প্রণালীর কথা না ভেবে ত্রাণ বিলির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।
বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফাল্গুনী পানের অভিযোগ, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভাবনা হওয়া উচিত
পড়াশোনা ও পড়ুয়াদের উন্নতি। কিন্তু, উপাচার্য ত্রাণ বিলির নামে আশেপাশের গ্রামে আবেগ তৈরির চেষ্টা করেছেন।’’ অনেক পড়ুয়ার অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যেখানে সমস্ত কলেজে আবেদন পত্রের মূল্য নিচ্ছে না, সেখানে বিশ্বভারতী আবেদনপত্রের মূল্য অপরিবর্তিত রেখে ভর্তির মূল্য হাজার টাকার বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। গবেষকদের ফেলোশিপের টাকাও ঠিক সময়ে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন পড়ুয়া, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান গবেষক ঋষভ মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাদবপুর ইতিমধ্যেই ৮০০ পড়ুয়ার আগামী তিন মাসের ইন্টারনেট রিচার্জ করে দিয়েছে। বাকি পড়ুয়াদের রিচার্জ ও প্রয়োজনে মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য অধ্যাপকদের কাছে এক দিনের বেতন সাহায্য হিসেবে চেয়েছে। কিন্তু, বিশ্বভারতীর শিক্ষার দিকে কোনও নজর নেই।’’
শিক্ষার দিকটি অবহেলিত থাকছে বলে মেনে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু অধ্যাপক। এঁদের বক্তব্য, “এমফিলের ছাত্ররা যদি তাঁদের গবেষণা নিবন্ধ অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ পেতেন, তা হলে এত দিনে অনলাইনেই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া মিটিয়ে ফেলা যেত। তাতে পিএইচডিতে ভর্তির ক্ষেত্রে তাঁরা সুবিধা পেতে পারতেন।”
একই সুর শোনা গিয়েছে প্রাক্তনীদের গলায়। মেলার মাঠ পাঁচিলে ঘিরতে যে বিরাট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেই টাকা বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য নানা খাতে ব্যয় হতে পারত বলেই তাঁদের মত। প্রাক্তনী বিদিশা ঘোষের কথায়, “বিশ্বভারতীর জন্য রবীন্দ্রনাথ নানা জনের কাছে কার্যত হাত পেতেছেন। আর বর্তমান কর্তৃপক্ষ সঙ্কটের
দিনেও ছাত্রস্বার্থে হাত উপুড় করতে দ্বিধা করছেন।’’