প্রতীকী ছবি।
শাসক দলের বিধায়কের নাম করে কলকাতার ব্যবসায়ীর প্রায় লাখ টাকা লোপাট করল প্রতারকরা। বেনিয়াপুকুরের লোয়ার রেঞ্জের বাসিন্দা নির্মাণ ব্যবসায়ী পারভেজ রেজা অভিযোগ, গত মাসের শেষ সপ্তাহে কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়কের নাম করে প্রতারকরা তাঁর কোম্পানির এক কর্মীকে গয়েশপুরে ডাকেন। সেখানে ওই কর্মীর সঙ্গে টেন্ডারের জন্য জনা দেওয়ার যে ৮২ হাজার টাকা ছিল, তা দুষ্কৃতীরা ভয় দেখিয়ে জোর করে কেড়ে নেন। গোটা বিষয়টি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধানকে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদম্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন শাখার আধিকারিকরা।
গোয়েন্দা প্রধানকে করা অভিযোগপত্রে পারভেজ জানিয়েছেন, গত মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর এক বন্ধু জানিয়েছিলেন, কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করাতে চান। তাঁকে বিধায়ক বা তাঁর অফিস থেকে ফোন করা হতে পারে। পারভেজ জানিয়েছেন, ২৯ ডিসেম্বর তিনি একটি ফোন পান। অন্য প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলে পরিচয় দেন। তিনি পারভেজকে জানান যে পুরসভার কয়েকটি কাজ জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। সেই কাজের টেন্ডারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ এবং টেন্ডার জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৮২ হাজার টাকা নিয়ে বিধায়কের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয় পারভেজকে।
বেনিয়াপুকুরের ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানিয়েছেন, পরের দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর তাঁর এক কর্মচারী সত্যব্রত পালকে দিয়ে সমস্ত নথি এবং টাকা পাঠিয়ে দেন তিনি। সত্যব্রতের মোবাইল নম্বরও তিনি জানিয়ে দেন সেই ব্যক্তিকে, যিনি নিজেকে বিধায়ক হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। পারভেজ তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, সত্যব্রতকে ওই ব্যক্তি গয়েশপুরে যেতে নির্দেশ দেন। সেখানে যাওযার পর এক যুবক মোটর সাইকেল নিয়ে আসেন। তিনি নিজেকে রমেন্দ্রনাথবাবুর ভাইপো বলে পরিচয় দিয়ে সত্যব্রতকে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যান। পারভেজ জানিয়েছেন, সেখানে ওই যুবক সত্যব্রতকে সঙ্গে থাকা টাকা দিতে বলেন। সত্যব্রত টেন্ডারের নথি চাইলে পাল্টা তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভয়ে ওই যুবককে টাকা দিয়ে দেন সত্যব্রত।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে ত্রিকোণ প্রেম! পিকনিকে গিয়ে নিখোঁজ তরুণের দেহ মিলল দমদমের ভ্যাটে
আরও পড়ুন: মধ্য কলকাতার পানশালায় মারধরের অভিযোগ অনুপম হাজরার বিরুদ্ধে
পারভেজ জানিয়েছেন, সত্যব্রতের কাছ থেকে গোটা ঘটনা শোনার পর তিনি, বিধায়ক পরিচয় দিয়ে যে ব্যক্তি ফোন করেছিলেন, তাঁকে ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যাক্তির ফোন বন্ধ ছিল। এর পর তিনি অন্য একটি সূত্র মারফত বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ফোন নম্বর পেয়ে ফোন করার পর বুঝতে পারেন যে কোনও প্রতারক বিধায়কের নাম করে ফোন করেছিলেন। এর পর তিনি গোটা বিষয়টি গোয়েন্দা প্রধানকে জানালে ৩ জানুয়ারি মামলা রুজু করে পুলিশ। রবিবার রমেন্দ্রনাথ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘‘ আমি শুনেছি এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি ওই ব্যাবসায়ীকে চিনি না। আমি কোনও দিন ফোনও করিনি। কে আমার নাম করে প্রতারণা করছে বুঝতে পারছি না। পুলিশকে অনুরোধ করব ওই প্রতারককে পাকড়াও করুক।” অন্য দিকে, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের ধারণা, প্রতারকরা বিধায়ক বা পারভেজের ঘনিষ্ঠ। ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তাঁদের হদিশ করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।