Job

Financial Scam: আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ, সপরিবার বাড়িছাড়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’

কোলা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের অতনু গুছাইত এক সময় কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। দু’বার কোলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধানও হন।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ০৫:৩৪
Share:

অতনু গুছাইত এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়

এসএসসিতে নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে। এই আবহেই রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দেওয়া কোলাঘাটের এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সরব হয়েছেন একঝাঁক চাকরিপ্রার্থী।

Advertisement

অতনু গুছাইত নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। অতনু সপরিবার এলাকাছাড়া। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘আর্থিক প্রতারণার প্রতিটি অভিযোগেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ অতনুকে দলের কেউ বলে এখন মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের সঙ্গে ওঁর দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই। উনি কী করেছেন কিছু জানি না।’’

কোলা গ্রামের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের অতনু গুছাইত এক সময় কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। দু’বার কোলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধানও হন। অতনু ও তাঁর ভাই শান্তনু (ডাক নাম লাল) বিশেষ কাজকর্ম না করলেও তাঁদের পেল্লায় বাড়ি। বাড়ির সামনে দুর্গাপুজোয় কলকাতা ও মুম্বইয়ের শিল্পীদের এনে জলসাও করতেন দুই ভাই। ঝাড়গ্রামে তাঁদের খামারবাড়িও রয়েছে। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, অতনু ও তাঁর স্ত্রী মানসী প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় দাবি করতেন। মানসী নিজেও প্রাথমিকের শিক্ষিকা।

Advertisement

বছর আষ্টেক আগে থেকে টানা কয়েক বছর অতনু-শান্তনুর হাত ধরে কোলাঘাটের বেশ কিছু যুবক-যুবতী এসএসসি, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং প্রাথমিকে চাকরি পান বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। অভিযোগ, সবটাই হত মোটা টাকার বিনিময়ে। প্রাথমিকে চাকরির দর ছিল ১২ লক্ষ টাকা, এসএসসি-তে ১৬ লক্ষ, গ্রুপ সি-তে ১২ লক্ষ আর গ্রুপ ডি-র চাকরির জন্য দিতে হত ১০ লক্ষ টাকা। নগদে পুরো টাকা দিতে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থাও ছিল। অতনুর পরিচিতের দোকানে সোনার গয়না জমা দিতে হত। অতনুদের বাড়িতে টাকা গোনার মেশিনও ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি।

তবে, ২০১৯ সালের পর থেকে আর আগের মতো চাকরি করে দিতে পারছিলেন না অতনু। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরে নতুন শিক্ষামন্ত্রী হন ব্রাত্য বসু। এর পরে নাকি অতনুর চাকরি করে দেওয়ার ক্ষমতা আরও সঙ্কুচিত হয়। চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরতের দাবি উঠতে শুরু করে। গত বছর জুলাইয়ে অতনুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। তার পরেই কোলাঘাটের বাড়িতে আর দেখা যায়নি অতনুদের। অতনু, শান্তনুর মোবাইলও বন্ধ।

কোলাঘাট থানায় অতনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন দাসপুরের প্রসেনজিৎ কুইলা। তিনি বলেন, ‘‘অতনু ও তাঁর স্ত্রী আমার পরিবারের চার জনকে প্রাথমিকে চাকরি করে দেবেন বলেছিলেন। বলতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। কয়েক জনের চাকরি করেও দিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসে ৬৫ লক্ষ টাকা দিই। কারও চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত পাইনি। অতনুর দেওয়া চেক বাউন্স করেছে।’’

পিএসসি-র ক্লার্কশিপের পরীক্ষার জন্যও অতনু টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কোলা গ্রামেরই অর্ণব গুড়ে বলেন, ‘‘অতনুকে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দিই। বাকি টাকা জোগাড়ে ওর বলে দেওয়া সোনার দোকানে স্ত্রীর গয়না দিই। চাকরি, টাকা, গয়না কিছুই পাইনি।’’ গত বছর আবার ২২ জনকে ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমে চাকরির নিয়োগপত্র দেন অতনু। পরে জানা যায় সব ভুয়ো নিয়োগপত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement