সেবাব্রতেই সেরা ফরাসি সম্মান নবতিপর ফাদার ফ্রাঁসোয়া লাবোর্দকে

বুধবার বিকেলে ক্যাথলিক সন্ন্যাসী ফাদার ফ্রাঁসোয়া লাবোর্দকে একান্ত আলাপচারিতায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, অর্ধশতক ধরে তাঁর ঘরবাড়ি এই ভারতের কোনটা সব থেকে খারাপ দিক?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
Share:

সংবর্ধনা: ফাদার ফ্রাঁসোয়া লাবোর্দকে (ডান দিকে) লিজিয়ঁ দ্য’নর সম্মান দিচ্ছেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজ়ান্দর জ়িগলর। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

আর ক’দিন বাদেই ৯২ পূর্ণ করবেন।

Advertisement

বুধবার বিকেলে ক্যাথলিক সন্ন্যাসী ফাদার ফ্রাঁসোয়া লাবোর্দকে একান্ত আলাপচারিতায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, অর্ধশতক ধরে তাঁর ঘরবাড়ি এই ভারতের কোনটা সব থেকে খারাপ দিক? শিশুর মতো হাসলেন তিনি। দুলে দুলে মাথা নাড়লেন! বললেন, ‘‘না, ও-সব কথা আজ থাক।’’

তবে এই দেশের মহত্ত্ব বা ‘স্পেশ্যাল ভার্চু’ বলতে পরিবার তথা বয়স্কদের প্রতি সম্মানবোধকেই এগিয়ে রাখলেন সেবাব্রতী সন্ন্যাসী। বললেন, ‘‘এ দেশের ঘরে ঘরে দাদা ও দিদিরা আমার কাছে খুব সম্মানের। সেই দাদা-দিদি, যাঁরা সর্বস্ব দিয়ে পরিবারটাকে রক্ষা করেন।’’

Advertisement

হাওড়ার আন্দুল রোডে তাঁর হাতে গড়া সংস্থার মাঠে জন্মসূত্রে ফরাসি, এই ভারতীয় নাগরিককে এ দিনই ফ্রান্সের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান লিজিয়ঁ দ্য’নর তুলে দেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত আলেকজ়ান্দর জ়িগলর। বললেন, ‘‘ফরাসি জাতীয় আদর্শ-ত্রয়ী— স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্বের মধ্যে তৃতীয়টির (ফ্রেটারনিটি) মূর্ত প্রতীক ফাদারের জীবন।’’ মাঠ জুড়ে তখন হুইলচেয়ারে অনাবিল খুশিতে ভাসছে বেশ কয়েকটি অবয়ব। শারীরিক-মানসিক সমস্যা, অটিজ়ম-সেরিব্রাল পলসি-ডাউন সিনড্রোম ইত্যাদি সমস্যার উজান-ঠেলা অজস্র জীবনের কান্ডারি ফ্রাঁসোয়া লাবোর্দ। আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমার কাছে মন্যুষ্যত্ব বলতে এই প্রান্তিক জনের সেবা।’’ হাওড়া, জলপাইগুড়ি, আসানসোলে ফাদারের সংস্থা ‘হাওড়া সাউথ পয়েন্ট’-এর বিভিন্ন কেন্দ্রে সমাজের এই ব্রাত্যদের ক্ষমতায়ন।

দমিনিক লাপিয়েরের ‘সিটি অব জয়’-এর চরিত্র একটি পোলিশ সন্ন্যাসীর প্রেরণা ফাদার লাবোর্দ। কলকাতার সন্ত টেরিজ়ার মিশনারিজ় অব চ্যারিটির প্রধান সিস্টার প্রেমার বার্তাতেও জাতিধর্ম নির্বিশেষে লাবোর্দের সেবাকাজের অকুণ্ঠ প্রশংসা। চেন্নাইয়ে সোশ্যাল ইনস্টিটিউট অব লয়োলা কলেজের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই ১৯৬৫ সালে এ দেশে তথাকথিত মূল স্রোতে প্রান্তিক জনের অবস্থান নিয়ে গবেষণায় মজেছিলেন লাবোর্দ। চেন্নাই থেকে কয়েক মাসেই তাঁর ঠিকানা বদলে হয়ে যায় হাওড়ার পিলখানা বস্তি। আন্দুল রোডের সংস্থার পত্তন ১৯৭৬-এ। আদ্যন্ত ভারতীয় রীতির

সংস্থাটির আদর্শ, সর্ব ধর্মের সমন্বয়। কয়েক মাস হল অবসর নিয়েছেন লাবোর্দ। বললেন, ‘‘এ দেশের সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কিছুতেই এগোতে পারতাম না আমি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement