এক্সক্লুসিভ অমিত: রাজ্য থেকে দিদিকে হটিয়ে ছাড়ব

একশো দশ দিনের ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার পশ্চিমবঙ্গে এলেন বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা বন্দরের অতিথিশালায় আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। বললেন, পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলি দখলে এ বার বিশেষ অভিযানে নামছেন তিনি। লক্ষ্য— তেলঙ্গানা, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ। শুনলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়একশো দশ দিনের ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার পশ্চিমবঙ্গে এলেন বিজেপির সবর্ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা বন্দরের অতিথিশালায় আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১১
Share:

সেনাপতি: দলীয় বৈঠকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মঙ্গলবার শহরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

প্রশ্ন: বাংলার জন্য আপনার পরিকল্পনা ঠিক কী?

Advertisement

অমিত শাহ: বাংলার মানুষ ত্রস্ত। তারা পরিবর্তন চাইছে। যে সব জায়গায় রাজ্য সরকার বিরোধী মনোভাব সবচেয়ে বেশি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে সর্বাগ্রে বাংলা। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এ রাজ্যে প্রবল ভাবে বেড়েছে। মানুষ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলায় সংগঠনের দ্রুত বিস্তার হচ্ছে। মজবুত সংগঠন নিয়েই আমরা লড়াইয়ে নামব ও জিতব।

Advertisement

প্রশ্ন: কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিসেব খুবই সরল। এ রাজ্যের ৩০% মুসলিম ভোটের সিংহভাগের সঙ্গে সরকারি উপভোক্তাদের একাংশের ভোট পেলেই উনি জিতবেন।

অমিত শাহ: দেখুন, আমরা ভোটারদের হিন্দু-মুসলিম এই দৃষ্টিতে দেখি না। কিন্তু যে ভাবে তোষণের রাজনীতি হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। যে ভাবে উৎসব পালনের ক্ষেত্রে, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বিলিতে, উন্নয়নের প্রশ্নেও তোষণ ও ভাগাভাগি হচ্ছে তা মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছে না।

আর ডোল বিলি করে যদি চিরকাল সরকারে থাকা যেত, তা হলে তো কোনও কালে কোনও সরকারই বদলাতো না। যে সব রাজ্যে শাসকরা হেরেছেন (মুচকি হাসিতে ইঙ্গিত উত্তরপ্রদেশ, অসমের দিকে) সেখানেও তো ডোল বিলি হয়েছে। তার পরেও তো পরিবর্তন হয়েছে।

প্রশ্ন: তৃণমূলের অভিযোগ, এ রাজ্যে আপনারাই মেরুকরণ করছেন।

অমিত শাহ: মমতা দিদির তোষণের জন্যই মেরুকরণ হচ্ছে। আমাদের জন্য নয়। সরকার যদি দশেরার দিন বিসর্জন দিতে না দেয়, তা হলে মেরুকরণ তো হবেই। যদি স্কুলে সরস্বতী পুজো করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়, তা হলে মেরুকরণ হবেই। যদি পুলিশ অনুমতি দেয়, মানুষের রাগ হবে না। কিন্তু অনুমতি না দিলে তো মানুষের রাগ হবেই।

প্রশ্ন: দিদিরও কিন্তু আপনার উপর ভীষণ রাগ। উনি বলেছেন, মোদীজির সঙ্গে কাজ করতে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার সঙ্গে রয়েছে।

অমিত শাহ: (হেসে) খুব ভাল। মোদীজির প্রতি ওঁর মনোভাব আমি স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব, এর পর নির্বাচনের ফলাফল দেখে ওঁর ফের মনের পরিবর্তন হবে (ফের হাসি)।

আরও পড়ুন:পাহাড় মেটাতে হবে মমতাকেই

প্রশ্ন: দেশের উন্নয়নে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক জরুরি। কিন্তু যা অবস্থা...

অমিত শাহ: দেখুন, আমরা কোনও রাজ্যের সঙ্গেই বৈষম্য করি না। কিন্তু তা বলে সব বিষয়ে রাজনীতি করাটা মোটেই উচিত কাজ নয়।

প্রশ্ন: কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য, রাজনীতি আপনারা করছেন।

অমিত শাহ: সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে পারছেন না, বেতন কমিশন দিতে পারছেন না, এ সবও কি বিজেপির জন্য হচ্ছে? একটা কথা শুনুন। (চোয়াল শক্ত করে) ভোটের ময়দানেই দিদির সঙ্গে লড়াই হবে। দিদিকে এ রাজ্য থেকে হটিয়েই ছাড়ব।

প্রশ্ন: কিন্তু সারদা-নারদ তদন্তের গতিপ্রকৃতি তো বোঝাই যাচ্ছে না।

অমিত শাহ: দেখুন আমরা ইউপিএ জমানার মতো সিবিআই চালাই না। সিবিআই তার কাজ করছে। কিন্তু এটা বলতে পারি, এ সব ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে।

প্রশ্ন: এমনও অভিযোগ উঠছে যে, বিজেপি তৃণমূলকে টার্গেট করছে?

অমিত শাহ: হ্যাঁ। ঠিকই তো। এর মধ্যে ভুলটা কী? করব না-ই বা কেন?

প্রশ্ন: বলা হচ্ছে, দুর্নীতির মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদেরও আপনারা টার্গেট করছেন?

অমিত শাহ: দেখুন, আপনি গুলিয়ে ফেলছেন। বিজেপির কাজ দুর্নীতি খোঁজা নয়। এ সব সিবিআইয়ের কাজ। সিবিআই করছে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের বহু নেতা আপনাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন। তাঁদের ভাঙিয়ে আনবেন?

অমিত শাহ: ভাঙিয়ে আনা শব্দটা আমি ব্যবহার করতে চাই না। এক রাজনৈতিক দল থেকে অন্য দলে এসে জনতার আশীর্বাদ নিয়ে জিতে আসার রীতি তো রয়েছে। তবে এ নিয়ে আমরা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, কয়েক জন সাংসদ, মন্ত্রীও রয়েছেন?

অমিত শাহ: আমার স্তরে সে সব এখনও আসেনি। আর আমরা কোনও সিদ্ধান্তও নিইনি।

প্রশ্ন: আপনাদের লক্ষ্য রাজ্যে সরকার গড়া। পারবেন?

অমিত শাহ: নিশ্চিত জেনে রাখুন। (চোয়াল শক্ত করে, কড়া দৃষ্টিতে) বাঙ্গালমে পূর্ণ বহুমত কি সরকার বনানে যা রহে হ্যায়। শুধু তাই নয় লোকসভায় ‘মেজরিটি সিট’ জিতব।

প্রশ্ন: কী ভাবে বলছেন এমন কথা?

অমিত শাহ: দেখুন বাংলা সীমান্তবর্তী রাজ্য। তোষণের রাজনীতির জন্য সীমান্তের জেলাগুলির যা হাল, তাতে সারা দেশ চিন্তিত। এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে। আমি এ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরাব। এ রাজ্যে উন্নয়ন স্তব্ধ, চাকরি নেই, কলকাতা থেকে ২০ কিমি দূরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হচ্ছে, বেহাল আইনশৃঙ্খলা, বোমা ফাটছে। মানুষ পরিবর্তন চাইছে, তা হবেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement