বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। পাশে ফিরহাদ হাকিম।—নিজস্ব চিত্র।
অল্প দিনের জন্য নতুন ইনিংসে দাঁড়ি! পুরনো দল তৃণমূলের প্রতিই তিনি অনুগত আছেন বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে প্রায় মুচলেকা দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী ম়ঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর! যে ভাবে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই লিখিত ভাবে আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, তাতে তাঁর প্রতি নরম হতেই চান শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের বড় অংশই আবার মঞ্জুলকে ফিরিয়ে আনার বিপক্ষে! মঞ্জুলের ভাগ্য নির্ধারণ এখন মমতার হাতেই!
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগে সপুত্র বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন মঞ্জুল। তাঁর ছেলে সুব্রত সেই উপনির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থীও হয়েছিলেন। দল ছাড়ার আগে বিজেপি-র রাজ্য দফতরে বসে তৃণমূল নেত্রী ও তাঁর দলকে তীব্র বিষোদগার করেন মঞ্জুল। কিন্তু মন্ত্রী পদ ছেড়ে দিলেও আইন মেনে বিধায়ক পদ ছাড়ার জন্য দরখাস্ত করেননি। তৃণমূলের পরিষদীয় নেতৃত্ব অবশ্য তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। বনগাঁয় বিজেপির হারের পরেই চিত্রনাট্যে পরিবর্তন হয়। ভুল স্বীকার করে পুরভোটের আগে তৃণমূল নেত্রীকে চিঠি পাঠান উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী। এর পরে বুধবার বিধানসভা ভবনে এসে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করেন।
পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘গাইঘাটার বিধায়ক মঞ্জুলবাবুর বিধানসভার সদস্যপদ খারিজের জন্য আমরা স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি স্পিকারকে এবং আমাদের লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, যা হয়েছে তার জন্য তিনি অনুতপ্ত। দলের প্রতি তিনি আনুগত্য দেখিয়েছেন।’’ মন্ত্রী পদ ছাড়ার পরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উৎসাহে একটি দুর্ন়়ীতির মামলা হয়েছিল মঞ্জুলের বিরুদ্ধে। সেই মামলা প্রত্যাহারের আর্জিও তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে জানিয়েছেন মঞ্জুল। এই বিষয়ে পার্থবাবুর বক্তব্য,‘‘আমরা ওঁর অনুরোধের কথা জ্যোতিপ্রিয়কে জানিয়ে দিচ্ছি।’’ যদিও জ্যোতিপ্রিয় এ দিন বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না, দল ওঁকে ফিরিয়ে নেবে! তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গাইঘাটার মানুষের ভাবাবেগকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’’
বিধানসভা চত্বরে এ দিন মঞ্জুলকে প্রায় আগলেই রেখেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ! তাঁর উপস্থিতিতেই বিধানসভা প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে মঞ্জুল স্বীকার করেন, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অনুতপ্ত। ক্ষমা চাইছি। আর কখনও এমন ভুল করব না!’’ বিজেপি কেন ছাড়লেন? মঞ্জুল বলেন, ‘‘আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল! ওই সময়ে অভিমানে দিদির সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছিলাম। কিন্তু ওখানে (বিজেপি) গিয়ে দেখলাম, কাজ করা যাবে না।’’ দল তাঁকে ‘ক্ষমা’ করে দিলে তিনি আবার মন্ত্রিত্বে ফিরবেন কি না, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব অবশ্য দেননি মঞ্জুল। ফিরহাদ জানান, যাবতীয় সিদ্ধান্তই দলনেত্রী নেবেন।
ঘটনাপ্রবাহ দেখে এক বিজেপি নেতার উপলব্ধি, ‘‘মনে হচ্ছে যেন, মঞ্জুলকে তৃণমূল ডেপুটেশনে পাঠিয়েছিল! উনি তৃণমূল নেত্রীর নামে তোপ দেগে আমাদের দলে ঢুকলেন, বনগাঁয় নিজের ছেলেকে প্রার্থী করালেন। তার পরে আমাদের হারিয়ে তৃণমূলে ফিরে গেলেন!’’