(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। মুখতার আব্বাস নকভি (ডান দিকে)। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য নিয়ে বিজেপি তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে বাংলার রাজনীতি আলোড়িত। যার আঁচ পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। সেই সন্ধিক্ষণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা একদা বিজেপির অন্যতম সংখ্যালঘু ‘মুখ’ মুখতার আব্বাস নকভি। তাতে তিনি যা লিখেছেন, তা দেখে অনেকেই মনে করছেন, শুভেন্দুকেই কটাক্ষ করতে চেয়েছেন প্রবীণ এই নেতা। যদিও পোস্টে কোথাও শুভেন্দুর নাম উল্লেখ করেননি নকভি। তবে কৌশলে ‘অধিকারী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন তিনি।
রাজনীতিতে সময়ের একটা মাহাত্ম্য আছে বলে অনেকে মনে করেন। সে দিক থেকে নকভি যে সময় পোস্ট করেছেন তা উল্লেখযোগ্য। শুভেন্দু বলেছিলেন বুধবার, নকভি পোস্ট করেছেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নকভি তাঁর এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘‘অতি উৎসাহের অধিকারী কেউ কেউ হড়বড় করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলছেন। এর ফলে অস্পৃশ্যতার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রত্যেকের বিশ্বাসকে সম্মান জানানো উচিত। তবে অস্পৃশ্যতাকে দূরে রাখাই শ্রেয়।’’ তার পর একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করেছেন নকভি। যার নির্যাস—সবাই ঈশ্বরের সন্তান। কেউই নিম্নবর্গের নয়।
২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ ছিলেন নকভি। বিজেপি করলেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সব দলের নেতাদের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। এখনও তা তিনি রক্ষা করেন। জাতীয় স্তরে দীর্ঘ দিন নকভি এবং শাহনওয়াজ হোসেন ছিলেন পদ্মশিবিরের সংখ্যালঘু ‘মুখ’। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন নকভি। ফলে তাঁর এই পোস্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির বর্ধিত কর্মসমিতির সভা ছিল বুধবার। সায়েন্স সিটিতে সেই বৈঠকে শুভেন্দুর বক্তৃতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি যে সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন পায়নি, সে কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দু প্রকাশ্যেই গলার স্বর চড়িয়ে বলেন, ‘‘আমিও বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। আর বলব না।’’ এর পর দু’হাত জড়ো করে কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘‘বলব, যো হমারি সাথ, হম উনকা সাথ। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বন্ধ করো।’’ বারংবার ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার আগে রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে হাঁটতে চাওয়ার মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আরও বলেছিলেন, ‘‘নো নিড অফ সংখ্যালঘু মোর্চা।’’ অর্থাৎ, দলে সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশ শাসনের স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ বন্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়ে চাপে পড়ে যান শুভেন্দু। তার পর সাফাই দিয়ে একটি এক্স পোস্ট করেন। যার মর্মার্থ— মোদীর স্লোগানে তাঁর ভরসা রয়েছে। তিনি তা বদলও করতে চাননি। তাঁর কথা ‘ভুল প্রেক্ষাপটে প্রচার’ হচ্ছে। শুভেন্দুর বক্তব্য যদিও খারিজ করে দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে বলে ফেলা কথার অভিঘাত আঁচ করতে পারছিলেন পদ্মশিবিরের নেতারাও। বৃহস্পতিবার যা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করলেন নকভি।