রাজীব সিংহ।
বিদায়বার্তায় কি সতীর্থদের সতর্কবাণী দিলেন বিদায়ী মুখ্যসচিব—জোর জল্পনা প্রশাসনের অন্দরে।
এক বছর মুখ্যসচিব হিসেবে কাজ করার পরে আজ, বুধবার সেই পদ থেকে অবসর নেবেন রাজীব সিংহ। গত ১৫ দিন ধরে প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পর্কে নিজের উপলব্ধি-অভিজ্ঞতা সতীর্থ আমলাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন রাজীব। তুলে ধরেছেন প্রশাসনিক মানসিকতার ভাল-মন্দের দিকগুলি। আচার-আচরণ-মনোভাব-কর্মপদ্ধতি সংশোধনের বার্তা দিয়েছেন ১৫ দফা স্লাইডে। আধিকারিক মহলের খবর, মুখ্যসচিবের মতে, ঊর্ধ্বতনের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও কোনও বিষয়ে নিজের স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন মতামত সরকারি ফাইলে থাকা জরুরি। সঠিক কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে বেছে নিলে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ যাতে কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তিনি।
নিজের বিদায়বার্তায় সর্বস্তরের আধিকারিকদের উদ্দেশে সিদ্ধান্তহীনতা বর্জনের পরামর্শ দেন বিদায়ী মুখ্যসচিব। তাঁর বার্তা, সাধারণ মানুষ যখন কোনও অমীমাংসিত বিষয় বা সমস্যার কথা তুলে ধরেন, তখন প্রশাসন নিরুত্তর থাকলে আমলাতন্ত্রের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। মানুষের অযৌক্তিক অনুরোধ মানা সম্ভব না হলে, সেই সিদ্ধান্তও চটজলদি দৃঢ় ভাবে নিতে হবে। তবেই সমাজে আমলাতন্ত্রের প্রতি আস্থা বাড়বে।
এই বার্তা ঘিরেই জল্পনা ছড়িয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। আধিকারিকদের একাংশের অনুমান, কোভিড এবং আমপান-পর্বে রেশন, ত্রাণ-ক্ষতিপূরণ বিলি-সহ সরকারের একাধিক পদক্ষেপ প্রবল ভাবে সমালোচিত হয়েছিল। অফিসারদের একাংশের ভূমিকা বিরোধীদের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার সংশোধনের পথে হাঁটলেও সমালোচনা আটকানো যায়নি। ফলে মুখ্যসচিবের এই বিদায়-বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক শিবির।
আরও পড়ুন: অভিযোগ দ্রুত মেটান, বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
অবশ্য, আধিকারিকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘদিন প্রশাসনের বিভিন্ন পদে কাজ করার সুবাদে রাজীব সিংহের অভিজ্ঞতা অগাধ। সেই দিক থেকে প্রশাসন-যন্ত্রকে উন্নত করার নিরন্তর প্রক্রিয়া ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের উদ্দেশেই তাঁর এই পরামর্শ।
এ বিষয়ে রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘এত দিন ধরে যা শিখেছি, জেনেছি, বুঝেছি, তা সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে পারি না। তাই পরবর্তী প্রজন্মের অফিসারদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে িনলাম।’’
প্রশাসনিক গতি ও দক্ষতা বাড়ানোর উপায়ও বাতলে দিয়েছেন রাজীব। তাঁর বার্তা, সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বাড়ানো প্রত্যেক অফিসারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কেউ কেউ তা করেন না। তাঁর মতে, জুনিয়র অফিসারদের ভুল ধরলেও কী এবং কেন ভুল হল, তা-ও ব্যাখ্যা করা জরুরি। বড় প্রেক্ষাপটে ভাবনাচিন্তা করা থেকে পিছু হটলে চলবে না। তাই স্বল্পমেয়াদির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি।