‘ওজনদার’ পোশাক ফেরালেন বনকর্মীরা

বন দফতর জানাচ্ছে, একটি মোটা জ্যাকেট এবং প্যান্ট, সেগুলির ভিতরেই রয়েছে লোহার ঘন তারজালি। সেই লোহার জাল হিংস্র জন্তুর ধারাল দাঁতে কাটা যাবে না, ভারী থাবার আঘাতও সয়ে যেতে পারবে বলেই দাবি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৩:২০
Share:

বনকর্মীদের সেই পোশাক। নিজস্ব চিত্র

দামাল বুনোদের কব্জা করতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে বন দফতর। বনকর্মীদের একটি অংশের দাবি, জন্তুটির যত কাছে গিয়ে গুলি ছোড়া যায়, ততই তাকে বিদ্ধ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু সেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতিতে বুনোদের হাত থেকে বাঁচতে বনকর্মীদের জন্য বিশেষ পোশাক আনা হয়েছিল জার্মানি থেকে। অনেকটা বর্মের ধাঁচে তৈরি এই পোশাকটির ওজন ২৭ কিলোগ্রাম। আর তাই নিয়ে দফতরের যত বিড়ম্বনা। দফতর সূত্রে খবর, এই ‘ভার’ বহন করা অত্যন্ত কঠিন কর্মীদের পক্ষে। কেউ কেউ বলছেন, এই পোশাক পরে বন্দুক তোলাই কঠিন। মহড়ার পরে তাই পোশাকটি ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কেমন সেই পোশাক? বন দফতর জানাচ্ছে, একটি মোটা জ্যাকেট এবং প্যান্ট, সেগুলির ভিতরেই রয়েছে লোহার ঘন তারজালি। সেই লোহার জাল হিংস্র জন্তুর ধারাল দাঁতে কাটা যাবে না, ভারী থাবার আঘাতও সয়ে যেতে পারবে বলেই দাবি। তারজালির দু’দিকে মোটা কাপড়ের সেলাই। সেই কাপড়টি এমন ভাবে রয়েছে যে, নখদাঁতের সেটি ভেদ করে তার পরে ভিতরের তারজালি ভেদ করে শরীরে পৌঁছনো অত্যন্ত কঠিন।

বন দফতর সূত্রের খবর, জার্মানির একটি সংস্থার সঙ্গে জঙ্গল বিষয়ক বেশ কিছু প্রকল্প চলছে তাদের। সেই যৌথ প্রকল্পেই এসেছে পোশাকটি। বন দফতর সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে একটি পোশাকই পাঠানো হয়েছিল জলপাইগুড়িতে।

Advertisement

জলপাইগুড়ির প্রতিটি রেঞ্জে একটি করে পোশাক পাঠানো হবে, এমন কথাই হয়েছিল। কিন্তু বনকর্মীদের দাবি, এটি ফিরিয়ে নিয়ে হাল্কা পোশাক দেওয়া হোক।

পোশাকে কতটা বিড়ম্বনায় পড়ছেন তাঁরা?

বনকর্মীদের দাবি, পোশাকটি পরে এক পা ফেলতেই লাগছে মিনিটখানেক। এই নিয়ে মহড়াও দিয়েছেন তাঁরা। এখন তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ধরুন চিতাবাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়তে হবে। দ্রুতগামী সেই জন্তুর কাছে পৌঁছনোর আগেই তো সে পালিয়ে যাবে। তা ছাড়া, চিতাবাঘকে গুলি করে বনকর্মীকেও পালাতে হয়। এই পোশাক পরে অভ্যাসের বশে পালাতে গেল সংশ্লিষ্ট কর্মী তো উল্টে পড়বেন।’’ যাঁরা মহড়া দিয়েছেন, তাঁদের কারও কারও কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে যেন মহাকাশে হাঁটছি!’’

পোশাকটির সঙ্গে একটি হেলমেটও রয়েছে। বহু জন্তুকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা বনকর্মী বিজয় ধরের কথায়, “পোশাকটি এতটাই ভারী যে দু’হাত দিয়ে বন্দুক তুলতেও কষ্ট হবে।”

জলপাইগুড়ির বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামীও বলেন, “একটি বিশেষ পোশাক আমরা পেয়েছি। সেটি কাজে লাগানো গেলে ভালই হত। কিন্তু পোশাকটির ওজন খুবই বেশি। তাই সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement