Jyotipriya Mallick

একফালি রোদ্দুর আটকে তাঁর তালাবন্ধ ঘরের দরজায়, বিধানসভায় মন্ত্রী বালুকে নিয়ে মুখে কুলুপ সতীর্থদের

সাধারণত অধিবেশনের সময় ছাড়া বিধানসভায় মন্ত্রীদের ঘর বন্ধই থাকে। কিন্তু সোমবার দেখা গেল অনেকেই বিধানসভায় বালুর ঘরের সামনে থেকে ঘুরে আসছিলেন। অন্য মন্ত্রীদের মতো বালুর ঘরেও তালা ঝুলছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩৬
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

হেমন্তের বিকেলের তেরছা রোদ্দুর এসে পড়েছে সাদা রঙের দরজাটার পাল্লায়। নীচের দিকের হ্যাসবোল্টে ঢুলছে তালা। ডান দিকের দেওয়ালে লাগানো পিতলের নেমপ্লেট। সেখানে ঘরমালিকের নাম ও পদ জ্বলজ্বল করছে। পুজোর ছুটির পর সোমবার প্রথম বিধানসভা খুলেছে। সেখানেই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের পাশে ঘর রয়েছে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের। সেই ঘরই দেখা গেল তালাবন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয়। তবে সোমবার বিধানসভায় এসেছিলেন শাসকদলের অনেক বিধায়ককই। বিধানসভার কর্মীদের সঙ্গে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। কিন্তু বালুর গ্রেফতারি নিয়ে তাঁরা কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সকলেই মুখে এঁটেছেন কুলুপ।

Advertisement

সাধারণত অধিবেশনের সময় ছাড়া বিধানসভায় মন্ত্রীদের ঘর বন্ধই থাকে। কিন্তু সোমবার দেখা গেল অনেকেই বিধানসভায় বালুর ঘরের সামনে থেকে ঘুরে-ফিরে আসছিলেন। অন্য মন্ত্রীদের মতো বালুর ঘরেও তালা ঝুলছে। ঘরের বাইরের দেওয়ালে নামফলকে বালুর নামের পাশে লেখা বন ও অচিরাচরিত শক্তি দফতরের মন্ত্রী। গত সেপ্টেম্বরে বিদেশ সফরে যাওয়ার আগেই জ্যোতিপ্রিয়কে শিল্প পুনর্গঠন দফতরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ফলকে তার উল্লেখ নেই।

তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘর। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভায় কর্মীদের একাংশ আলোচনা করছিলেন, এ বার বালুর এই ঘরের কী হবে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরর মতো কি বালুর ঘরও তালাবন্ধ হয়েই পড়ে থাকবে? ২০২২-এর জুলাইয়ে রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। তার পর তাঁকে তৃণমূল সাসপেন্ড করে। একই সঙ্গে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বেহালা পশ্চিমের বিধায়ককে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘর লাগোয়া বড় ঘরটিতে বসতেন পার্থ। তাঁর গ্রেফতারির পর সেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই ঘর পেতে রাজ্যের প্রথম সারির অনেক মন্ত্রীই আবেদন জানিয়েছিলেন বিধানসভা সচিবালয়ের কাছে। কিন্তু কাউকে সেই ঘর দেওয়া হয়নি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘরটি তালাবন্ধ। যদিও ঘরের সামনে থেকে পার্থের নামফলক অনেক আগেই খুলে নেওয়া হয়েছিল। পার্থ তৃণমূলের মহাসচিব পদের পাশাপাশি বহু গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। বিধানসভায় নিজের ঘরে বসেই বহু দায়িত্ব সামলাতেন। একই রকম ভাবে বিধানসভায় জ্যোতিপ্রিয়ের ঘরে শাসকদলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধায়কদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা ছিল। সেই বিধায়কেরা এখন কোন ঘরে বসবেন, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

২০০১ থেকে বিধানসভার সদস্য জ্যোতিপ্রিয়। প্রথম ১০ বছর গাইঘাটার বিধায়ক থাকাকালীন বিধানসভায় বিরোধীদলের বিধায়কদের ‘ঘর’ ছিল বালুর দফতর। ২০১১ সালে আসনের সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভাতেও বালুর ঠিকানা বদল হয়ে যায়। হাবড়া থেকে জিতে খাদ্যমন্ত্রী হলে বালুর জন্য বিধানসভায় স্পিকারের দফতরের পাশের ঘরটি বরাদ্দ হয়। গত ১২ বছর এই ঘরে বসেই নিজের কাজকর্ম করতেন জ্যোতিপ্রিয়। ২০২১ সালে খাদ্যের বদলে বনমন্ত্রী করা হলেও, বিধানসভায় নিজের ঘরটি ছাড়েননি তিনি।

সোমবার বিধানসভায় এসেছিলেন বালুর ছাত্র রাজনীতির ‘গুরু’ বজবজের বিধায়ক অশোক দেব। বিধানসভার কর্মীদের বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতে এসেছিলেন তিনি। সতীর্থ তথা শিষ্যের ইডির হেফাজতে থাকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে নীরব থেকেছেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। এসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনায় জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাজনীতি করা নির্মল ঘোষ। বালু প্রসঙ্গে মুখ্যসেচতক নির্মলকে প্রশ্ন করায় নীরব থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন তিনি। বিধানসভায় জ্যোতিপ্রিয়ের পাশের ঘরে বসা বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়ও তাঁর সতীর্থের গ্রেফতারি নিয়ে কোনও জবাব না দিয়েই সকলের সঙ্গে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে বেরিয়ে যান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement