পর্যটন: জলঢাকার বন বাংলো। —নিজস্ব চিত্র।
কারও পছন্দ পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ কিংবা সবুজ বনাঞ্চল। কেউ বা নদীর ধারে রাত কাটাতে ভালবাসেন। অথচ ভরা পর্যটন মরসুমে রাত্রিবাসের বাংলো কিংবা কটেজে বুকিং মেলে না। ওই আক্ষেপ ঘোচাতে এবার উত্তরবঙ্গের পাহাড় থেকে প্রকৃতির কোলে রাত্রিবাসের পরিকাঠামো বাড়াতে উদ্যোগী হল রাজ্য বন উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষ। নিগম সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা খরচ করে ওই পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় কাজও হচ্ছে। বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, “একাধিক স্পটে টুইন কটেজ তৈরি করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পুজোর আগেই পর্যটকদের থাকবার পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা হচ্ছে।”
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের যে সব এলাকায় ওই ‘টুইন কটেজ’ হচ্ছে সেই তালিকায় মূর্তি, লোলেগাঁও, সুলতানেরখোলা, জলঢাকার নাম রয়েছে। এ ছাড়াও রাজাভাতখাওয়াতেও রাত্রিবাসের শয্যা বাড়ানর পরিকল্পনা হয়েছে। নিগমের এক কর্তা জানিয়েছেন, মূর্তিতে চারটি, লোলেগাঁওয়ে চারটি, সুলতানেরখোলা ও জলঢাকায় ৩টি টুইন কটেজ করা হচ্ছে। যাতে একসঙ্গে দুটি করে থাকবার ঘর থাকবে। একটি করে পরিবারের অন্তত ২-৩ জন সেখানে অনায়াসে থাকতে পারবেন। সবমিলিয়ে কাজ সম্পূর্ণ হলে উত্তরবঙ্গে টুইন কটেজের সংখ্যা আরও ১৪টি বাড়বে। কিন্তু টুইন কটেজ বাড়ানোর এমন ভাবনা?
নিগম কর্তাদের দাবি, পর্যটকদের অনেকে এক সঙ্গে দুই পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন। তারা পাশাপাশি ঘরে থাকতে আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু সে ভাবে টুইন কটেজের পরিকাঠামো না থাকায় ওই চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ভরা পর্যটক মরসুমে সাধারণ বাংলোর বুকিং দেওয়াও মুশকিল হয়। সব কিছু ভেবেই একঢিলে দুই পাখি মারতে টুইন কটেজের সংখ্যা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রাজাভাতখাওয়ার রিসর্টে অবশ্য চারটি নতুন ঘর তৈরি করা হচ্ছে। তাতে শয্যা বাড়বে আটটি।
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নিগমের ৩২টি ‘স্পট’ রয়েছে। সবমিলিয়ে শয্যা সংখ্যা ২৭২টি। এ বার পুজোর আগে ওই সংখ্যা বাড়িয়ে তিন শতাধিক করার ভাবনা থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নিগমের ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারের্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট স্যানাল বলেন, “পর্যটকদের থাকবার পরিকাঠামো যত বাড়বে তত ভিড়ও বাড়বে। তবে এটাও ঠিক পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে নতুন নতুন এলাকা চিহ্নিত করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।” নিগমের এক কর্তা জানান, বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। বীরভূমের ইলামবাজারকে কেন্দ্র করে পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।
এ বার গরমের মরসুমে পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়েছে উত্তরবঙ্গে। অনেকেই পাহাড়ে গিয়েছেন। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা পাহাড়ে জায়গা পাননি তাঁরা ডুয়ার্সেই এসেছেন। তাই কটেজ ও বাংলোর কদর বেড়েছে। যে টুকু ব্যবস্থা রয়েছে, তার চেয়ে বেশিই যে এখনই দরকার তা পর্যটন ব্যবসায়ীরা সরকারের কানেও তুলেছেন।