ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে বিভিন্নভাবে বিপদে পড়তে হয় এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের। —ফাইল চিত্র।
এ-ও এক ‘হেল্পলাইন’। বিপদে পড়লে একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলেই মিলবে সাহায্য। পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার জন্য, শ্রীঘ্রই একটি ‘হেল্পলাইন’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ তথা রাজ্যের পরিয়াযী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। উদ্দেশ্যে একটাই, ভিন্ রাজ্যে গিয়ে শ্রমিক বিপদে পড়লে তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে যাতে দ্রুত সাহায্য করা যায়।
লকডাউনের সময় হোক কিংবা ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনা, কিংবা সম্প্রতি বীরভূম, জলপাইগুড়ি জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু— রুজির টানে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে কী ভাবে বিপদে পড়তে হয় এ রাজ্যের শ্রমিকদের, তা বারবার সামনে এসেছে। এ বছর এপ্রিলে রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ (মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড) গঠন করেছে। দিন কয়েক আগে বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে রাজ্যসভায় তৃণমূলের নবনিযুক্ত সাংসদ সামিরুল ইসলামকে।
তারই অঙ্গ হিসাবে ১০৯৮, ১১২ বা ১০০-র মতো ‘হেল্পলাইন’ চালুর ভাবনা নিয়েছে বোর্ড। সামিরুলের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট ওই নম্বর চালু করার পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিবন্ধীকরণের জন্য একটি অ্যাপও নিয়ে আসা হবে।’’ তিনি জানান, অ্যাপ আগেও ছিল। সেটির সরলীকরণ করা হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা যাতে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, বিপদে সাহায্য চাইতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই ‘হেল্পলাইন’।
তবে, এই ‘হেল্পলাইনে’ আসল সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু। কোভিড-কালে দেশ জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কট
সামনে আসার পরে ওই অংশের জন্য আলাদা সংগঠন করেছে সিটু। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের পরিযায়ী শাখার রাজ্য কমিটি একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত সাড়ে পাঁচ লক্ষ শ্রমিকের (এ রাজ্যের মূল বাসিন্দা) তালিকা রাজ্য সরকারকে জমাও দিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সঙ্গে অবশ্য ওই সংগঠনকে এখনও যুক্ত করার কথা বলা হয়নি সরকারি তরফে।
অনাদি বলেন, ‘‘বিপদে পড়ে একটা লাইনে শ্রমিকেরা যোগাযোগ করতে পারলে ভাল। কিন্তু, এই একটা উদ্যোগে তো সমস্যার সমাধান হবে না। আর্থিক অবস্থার যাতে উন্নতি হয়, রাজ্যে যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় এবং বিপুল সংখ্যায় মানুষকে বাইরে যেতে না হয়, সেটা দেখাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।’’ সিটুর দাবি, ব্লক স্তরে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তথ্যভান্ডার চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। বর্তমান সরকারেরও সেই কাজ করা উচিত।
সামিরুলের মতে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ সহজ নয়, সময় লাগবে। তবে, দেশে প্রথম কোনও সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এমন একটি বোর্ড তৈরি করল বলে তাঁর দাবি। এই পর্ষদ প্রথম যে কাজটি শ্রম দফতরের মাধ্যমে করতে চায়, সেটা হল, ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া প্রত্যেক শ্রমিকের তথ্যভান্ডার তৈরি করা এবং শ্রমিকদের নিবন্ধীকরণ। শ্রমিকের কী নাম, কোথায় বাড়ি, কোন কাজে তিনি দক্ষ, কত বছর ধরে কাজ করেন, কোথায় গিয়েছেন, এমন নানা তথ্য রাখা থাকবে পর্ষদের কাছে। সময়ে নিবন্ধীকরণ পুনর্নবীকরণ এবং শ্রমিক বাইরে না থাকলে সেই নিবন্ধীকরণ বাতিল করার ব্যবস্থাও থাকছে।