ফাইল ছবি
দশটা বছর পার করে হাতে এসেছে ক্ষতিপূরণের টাকা! তবুও থামতে রাজি নন মামলাকারী। এ বার তাঁর লড়াই ক্ষতিপূরণ দেরিতে পাওয়ার জন্য আদালতের নির্ধারিত দৈনিক ক্ষতিপূরণ আদায় করার। এ হেন লড়াই যাদের বিরুদ্ধে, সেই ভারতীয় রেল অবশ্য আর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি নয়। অতএব, ফের লড়াই শুরু।
ইছাপুরের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী সুশান্তকুমার সাহা বছর দশেক আগে পুরী যাবেন বলে ব্যারাকপুর স্টেশন থেকে টিকিট কেটেছিলেন। সুশান্তবাবু জানান, টিকিটের বয়ান অনুযায়ী ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর কলিঙ্গ-উৎকল এক্সপ্রেসে তাঁর খড়্গপুর থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত দিনে তিনি খড়্গপুর স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন, ট্রেনটি সেখান দিয়ে যাবে না। অন্য ট্রেন ধরে সাধারণ কামরায় পুরী যান তিনি। সে দিনই খড়্গপুরের স্টেশন মাস্টারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।
পরে তিনি মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ওই আদালত মামলা খারিজ করে দেয়। সুশান্তবাবু ফের রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে রায়
ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে রেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লক্ষ এক হাজার আটশো পঞ্চাশ টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। সেই সঙ্গে আদালত এ-ও বলেছিল, টাকা দিতে দেরি হলে গুনাগার বাবদ দিন-পিছু পঞ্চাশ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রেল।
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লির জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন রেল কর্তৃপক্ষ। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কেই বহাল রাখে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ফের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানেও রেল হেরে যায়। এর পরে মামলাকারীর আইনজীবী এগজ়িকিউশন ফাইল করলে রেলের তরফে তাঁকে এক লক্ষ এক হাজার আটশো পঞ্চাশ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
সুশান্তবাবুর অভিযোগ, ‘‘২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় ঘোষণার দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। অতএব, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, দিন-পিছু অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা হিসাবে রেলের থেকে গত আট বছরে আরও এক লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার আটশো পঞ্চাশ টাকা পাওয়ার কথা।’’ দৈনিক পঞ্চাশ টাকা ক্ষতিপূরণ পেতে আগেই রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন সুশান্তবাবু।
গত ২ ডিসেম্বর রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মামলাকারীর আবেদনকে সমর্থন করে দিন-পিছু পঞ্চাশ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাঁর টাকা কী ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা দেখতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছে।
রেলের আইনজীবী দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রেনটি যে খড়্গপুর স্টেশন হয়ে যাবে না, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমরা মামলাকারীকে ক্ষতিপূরণ বাবদ লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিয়েছি। উনি বাড়তি টাকা দাবি করতে পারেন না। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের একতরফা রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আমরা আদালতে যাব।’’
আর মামলাকারীর দাবি, ‘‘দশ বছর আগে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পুরী যাওয়ার নিশ্চিত টিকিট কেটেও সেই ট্রেনে উঠতে পারিনি। ট্রেনটি যে খড়্গপুর স্টেশন দিয়ে যাবে না, তা রেল আমাকে জানায়নি। আইন মেনেই রেলের থেকে বাড়তি ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ে পিছপা হব না।’’
রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘মামলাকারী বদ্ধপরিকর হলে যে সুবিচার পাওয়া যায়, তা প্রমাণ হয়েছে। মানুষকে জানাতে চাই, যে কোনও প্রতারণার ক্ষেত্রেও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দরজা খোলা রয়েছে।’’