কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই দলে অভ্যন্তরীণ গন্ডগোলের প্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষের পরিবর্তে দলে অপেক্ষাকৃত নতুন সুকান্ত মজুমদারের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়।
লকেট চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনে ব্যস্ত দল। তাই ইচ্ছে থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির কোন্দল মেটানোর প্রশ্নে তৎপর হতে পারছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার পরেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল থামাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সক্রিয় হবেন বলে জানালেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্য কমিটি গড়ার পর থেকে যে বিবাদ রাজ্য বিজেপিতে দেখা গিয়েছিল তা ক্রমশ সময়ের সঙ্গে আরও চওড়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন দলের অধিকাংশ নেতাই। জেলা ও রাজ্য কমিটিতে মতুয়া সমাজের প্রতিনিধিত্বের অভাবে বিদ্রোহের সুর শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের গলায়। পরবর্তী সময়ে বিক্ষুব্ধ নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারিদের সঙ্গে নিয়ে চড়ুইভাতি করেন শান্তনু ঠাকুর। সাময়িক ভাবে সাসপেন্ড হন জয়প্রকাশ ও রীতেশ। রাজ্য কমিটি গড়া নিয়ে বিক্ষোভের সুর জেলায়-জেলায়। পশ্চিমবঙ্গের ওই অভ্যন্তরীণ ঝামেলার বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। সম্প্রতি সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের সমস্যার দিকগুলি ওই বৈঠকে তুলে ধরেন তিনি। সূত্রের মতে, সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দেখা করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে। যুযুধান দুই শিবিরের উত্তাপ কমাতে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে বৈঠক হয় নিশীথ প্রামাণিক ও শান্তনু ঠাকুরের। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন না দলের একাংশ। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে ওঠা উত্তরবঙ্গে পুরভোটে কার্যত সেই অর্থে কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দল।
গত লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব ফল করেছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই দলে অভ্যন্তরীণ গন্ডগোলের প্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষের পরিবর্তে দলে অপেক্ষাকৃত নতুন সুকান্ত মজুমদারের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সুকান্তের নেতৃত্বে রাজ্য কমিটি গঠনের পরে যে অভ্যন্তরীণ বিবাদ দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে তাতে আগামী লোকসভা ভোটে দলের ফল ধরে রাখা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব। লকেটও মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরাসরি হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত বিরোধ মেটার সম্ভাবনা কম। হুগলির সাংসদ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার সমস্যা সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোটই এখন দলের প্রাধান্য। যে ইঙ্গিত পেয়েছি, আগামী ১০ মার্চ ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে বঙ্গ সমস্যা নিয়ে তৎপর হবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’