প্রতীকী ছবি
বিধানসভা ভোটের এক বছরও বাকি নেই। বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের পারদ ক্রমেই চড়ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতার জোরদার বার্তা দিতে রেশন ব্যবস্থায় এসএমএস এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতি শুরু করার নির্দেশ দিল রাজ্যের খাদ্য দফতর। এই ব্যবস্থায় রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের নম্বর ও গ্রাহকের ফোন নম্বর যুক্ত করে দেওয়া হবে রেশন।
বেশির ভাগ মানুষের কাছেই খাদ্য দফতরের পরিষেবা সরাসরি পৌঁছয়। সঙ্কটকালে রেশনে খাদ্যসামগ্রীর বিলিবণ্টন ঘিরেই পরপর অভিযোগ উঠেছিল। লকডাউনের নিয়ন্ত্রণ বিধি এখনও কার্যকর থাকায় নতুন সিদ্ধান্ত রূপায়ণে তাড়াহুড়ো করবে না দফতর। ধীরেসুস্থে, সতর্কতা-বিধি মেনেই তা বাস্তবায়িত করা হবে।
এই ব্যবস্থায় ভিড় এড়াতে মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে রেশন কার্ড, আধার কার্ড, মোবাইল নিয়ে এলাকার রেশন দোকানে যোগাযোগ করতে বলা হবে উপভোক্তাদের। রেশন দোকানে ‘ই-পস’ যন্ত্রের মাধ্যমে উপভোক্তার ডিজিটাল রেশন কার্ডের নম্বরের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত হবে।
পরের ধাপে যুক্ত হবে উপভোক্তার মোবাইল নম্বরও। আধার-সংযুক্তির পরে বায়োমেট্রিক যাচাই প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ দিয়ে ‘ই-পস’ যন্ত্রের মাধ্যমে রেশন তুলতে পারবেন উপভোক্তা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সফল না-হলেও মোবাইল নম্বরে আসা ‘ওটিপি’ নম্বর দিয়ে রেশন তোলা যাবে। রেশন সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে উপভোক্তা প্রাপ্তির বার্তা পাবেন নিজের মোবাইলে। খাদ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “রেশন ডিলার গ্রাহকের রেশন কার্ড-আধার-মোবাইল নম্বর যুক্ত করতে বাধ্য। সরকারের লক্ষ্য, গোটা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা। উপভোক্তার রেশন যাতে বেহাত না-হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।”
লকডাউনে প্রান্তিক ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিল রেশন পরিষেবা। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেশনে নিখরচায় খাদ্যশস্য বণ্টন শুরু করে রাজ্য। কেন্দ্রও একই পথে হাঁটে। কেন্দ্র রেশনের সময়সীমা নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোয় রাজ্যের এই পরিষেবা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত চালানোর কথা ঘোষণা করেন মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু লকডাউন পর্বেই রাজ্যের রেশন নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করে দিকে দিকে। সরকারের একাধিক ঘোষণা বা রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপেও সেই অভিযোগ ধামাচাপা পড়েনি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তখনই বিকল্প পথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কৌশল তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল খাদ্য দফতরকে। গ্রাহকেরা যাতে নিজের রেশন নিজেরাই পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। তাই এসএমএস ও বায়োমেট্রিক পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। এ রাজ্যে রেশন কার্ডের সংখ্যা কমবেশি ১০ কোটি। কিন্তু বহু উপভোক্তার মোবাইল নম্বর দফতরের কাছে এখনও নেই বলে সরকারি সূত্রের খবর। তা জোগাড় করার কাজ চলছে পূর্ণ গতিতে। প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান, উপভোক্তাদের এসএমএস পরিষেবা দিতে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু স্বচ্ছতার বৃহত্তর স্বার্থে দফতর এই অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতেও রাজি।